67592_un-342x228

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ মার্চ: বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃবৃন্দকে সংলাপে বসা ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক।জাতিসংঘের নিয়মিত সংবাদ-সম্মেলনে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গ্রেপ্তার ও আটকের পর তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন ডুজাররিকের কাছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বা জাতিসংঘের অন্য কোন প্রতিনিধিকে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয় মুখপাত্রের কাছে। নিচে সংবাদ-সম্মেলনের বাংলাদেশ অংশটুকু তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: আমি বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার কাছে প্রশ্ন করতে চাই। বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কেউ কেউ বলছেন, আটকাবস্থায় তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশমনের (উত্তেজনা) ব্যাপারে এই মঞ্চ থেকে আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া কি এবং বাংলাদেশে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বা অন্যদের পাঠানোর ব্যাপারে আরও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে কি?মুখপাত্র: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ ও দেশটিতে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আমরা যা বলেছি, সেটি পুনর্ব্যক্ত করা ব্যতীত আর নতুন কোন তথ্য নেই আমার কাছে। তবে এ ব্যাপারে আমি আপনাকে আরও তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযাগ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি স্বীকার করেনি।রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সালাহ উদ্দিনের নামে হরতালসহ নানা কর্মসূচির বিবৃতি গণমাধ্যমে আসছিল। তবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছিলেন না এই রাজনীতিক।রিট আবেদনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।হাসিনা আহমেদের অভিযোগ, তিনি গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হবে না- সরকারকে তা জানাতে বলেছে আদালত।সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রুল জারি করে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‌্যাব মহাপরিচালক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (বিশেষ শাখা), পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এবং উত্তরা থানার ওসিকে রোববারের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত।এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালতে শুনানির পর খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা যে কেউ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার বা আটক’ করে থাকুক, তাকে হাজির করতে আদালতে এই আবেদন করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় আলোচনার পর আদালত রুল দিয়েছে। তাকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই রুল দেওয়া হয়েছে। আর যদি তাদের কাছে থেকে থাকে তাহলে অন্তত পরিবারকে মানসিক কষ্ট থেকে রেহাই দিতে তারা স্বীকার করবেন।এই বিএনপি নেতা বলেন, সারা দেশে গ্রেপ্তার চলছে, অপহরণ চলছে, সারা বাংলাদেশ একটা জেলখানায় পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘের নিয়মিত সংবাদ-সম্মেলনে ফের উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র‌্যাব) বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের অনেক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। বন্দি নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত র‌্যাবসহ পুলিশের অন্য ইউনিটগুলো সম্প্রতি বন্দি নির্যাতন আইন বাতিলের যে ইচ্ছার কথা জানিয়েছে, তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অধিদপ্তরের মনোযোগ আকর্ষণ করবে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিকের কাছে। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এ বিষয়ে আগের মতোই জবাব দিয়েছেন।প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক তার প্রশ্নে বলেন, আমি বাংলাদেশ বিষয়ে আপনার কাছে প্রশ্ন করতে চাই। পুলিশের (বাংলাদেশে) কয়েকটি ইউনিট আছে, যার মধ্যে কয়েকটি ব্যাপারে আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও অন্যরা (পুলিশ ইউনিট) জনসমক্ষে বলছে তারা একটি আইন প্রত্যাহার করতে চায়। কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন নিষিদ্ধ করতে চায়, কারণ তারা (র‌্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট) নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। আমি জানতে চাই, জাতিসংঘের বিভিন্ন ধরনের শান্তিরক্ষী মিশনে এ (পুলিশ) ইউনিটগুলোর বহু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা কি ডিপিকেও’র (ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস) মনোযোগ আকর্ষণ করবে?

জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র আমি রিপোর্টটি দেখিনি। আমি মনে করি, মহাসচিবের অবস্থান হচ্ছে অবশ্যই নির্যাতনের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার ও রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সমঝোতায় স্বাক্ষর করা ও আন্তর্জাতিক আইনকে সমুন্নত রাখার পক্ষে। ডিপিকেও’র কাছ থেকে আমি যদি আরও তথ্য পাই, আপনাকে জানিয়ে দেবো।