দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ মার্চ: সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ৷ সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে এখন অস্বীকার করছে বলেও দাবি তাঁর৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে ল রিপোর্টার্স ফোরামের কক্ষে এক প্রেস কনফারেন্সে এ দাবি জানিয়ে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এভাবে তুলে নিয়ে যাবে, কেউ কিছু বলবে না, এটা কীভাবে হয়৷
হাসিনা আহমেদ ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে এক আবেদন করেন৷ ফৌজদারি কার্যবিধিতে করা ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে এবং আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ৷ আগামী রোববারের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) প্রধান, সিআইডির প্রধান, ডিএমপির কমিশনার ও উত্তরা থানার ওসিকে রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে৷ হাইকোটের্র রুলের পরই হাসিনা আহমেদ প্রেস কনফারেন্স করেন৷
হাসিনা আহমেদ বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে যে অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে অবস্থায় অক্ষতভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হোক, অথবা কোর্টে হাজির করা হোক৷ তিনি দাবি করেন, গোয়েন্দা পরিচয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ যাঁরা তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন তাঁরা ওই বাসার দারোয়ানের কাছে নিজেদের গোয়েন্দা’ বলে পরিচয় দিয়েছেন৷ মঙ্গলবার রাত ১০টার পরে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর আর যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান হাসিনা আহমেদ৷
ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসিনা আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা তুলে নিয়ে যায়নি৷ এভাবে তুলে নিয়ে যাবে, কেউ কিছু বলবে না, এটা কীভাবে হয়৷ তিনি আরও বলেন, এর আগে গত শনিবার রাতে সালাহ উদ্দিন আহমেদের বাসার দুইজনকে ধরে নিয়ে অকথ্য ভাষায় নির্যাতন করে গুলশান থানায় সোপর্দ করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি প্রশ্ন করেন, তাদের কী দোষ, তারা তো পেটের দায়ে চাকরি করে৷
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোন কোন বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি, অন্যদের সঙ্গে করেছি৷দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্মমহাসচিব রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সালাহ উদ্দিন৷ সে সময়ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন৷ বুধবার(১১ মার্চ) থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷তবে পুলিশ, র্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই৷ মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি৷ কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি৷সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও র্যাবের লোকেরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেন৷বুধবার রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে৷ তবে দুই থানাই জিডি গ্রহণ করেনি৷বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে৷
বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত (মঙ্গলবার) রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে৷ একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে৷ এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি৷ এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷অবিলম্বে সালাহউদ্দিনের মুক্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে৷