দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ মার্চ: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে আগামী রোববারের (১৫ মার্চ) মধ্যে কেন খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট৷২৪ ঘন্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা ফৌজদারি আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রুল জারি করেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ৷
এর আগে সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাসিনা আহমেদের পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন৷ তিনি ছাড়াও আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও এজে মোহাম্মদ আলী৷ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি’র কমিশনারকে৷বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হবে না- সরকারকে তা জানাতে বলেছে আদালত৷সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগামী রোববারের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত৷ রিট আবেদনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়েছিলেন হাসিনা আহমেদ৷মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযাগ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি স্বীকার করেনি৷
রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সালাহ উদ্দিনের নামে হরতালসহ নানা কর্মসূচির বিবৃতি গণমাধ্যমে আসছিল৷ তবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছিলেন না এই রাজনীতিক৷হাসিনা আহমেদ বলেন, আমি (মঙ্গলবার) রাতে প্রথমে গুলশান থানা এবং পরে উত্তরা থানায় আমার স্বামীর সন্ধান চেয়ে জিডি করতে গিয়েছিলাম৷ কোথাও আমার জিডি গ্রহণ করা হয়নি৷ থানার কর্মকর্তারা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে গ্রহণ করেনি৷ যে বাড়িতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সেই বাড়ির নম্বরসহ মালিকের নাম-ঠিকানাসহ অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন বলে জানান তার স্ত্রী৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন ভদ্র মহিলা একটি অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন৷ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ সাক্ষীর ব্যাপারে তার সহযোগিতা চেয়েছিলাম৷ তবে সহযোগিতা না করে তিনি চলে যান৷সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন৷ পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কঙ্বাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান৷ তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন৷
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্মমহাসচিব রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সালাহ উদ্দিন৷ সে সময়ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন৷ বুধবার(১১ মার্চ) থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷তবে পুলিশ, র্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই৷ মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি৷ কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি৷সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও র্যাবের লোকেরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেন৷
বুধবার রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে৷ তবে দুই থানাই জিডি গ্রহণ করেনি৷বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে৷
বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত (মঙ্গলবার) রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে৷ একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে৷ এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি৷ এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷অবিলম্বে সালাহউদ্দিনের মুক্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে৷