দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ মার্চ: ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। নাম সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে এক এক জন এক থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এই অর্থের কোনো হিসাবও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৮ম বৈঠকে এ অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা।তবে এই অভিযোগের সঙ্গে একমত হলেও কিছু করণীয় নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী বা ওই কমিটির সভাপতি। বৈঠক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, এ কে এম ফজলুল হক, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং মোছা. সেলিনা জাহান লিটা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য এ কে এম ফজলুল হক বলেন, নবম সংসদের মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা খরচের কোনো হিসাব নেই। বিষয়টি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছি যেসব টাকা গায়েব হয়েছে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাবে কি না?এ বিষয়ে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি,– জানান ফজলুল হক।
এবার জলবায়ু ফান্ডের টাকা সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বছর শুরু আগেই যে পরিমাণ টাকা ছাড় হবে তা সুনির্দিষ্ট করে হিসাব রাখতে হবে। অন্যথায় প্রকল্প হাতে নিলেও তা সঠিক সময়ে শেষ করা যায় না।এসব কারণে অনেক সময় বিভিন্ন প্রকল্প আলোর মুখই দেখতে পায় না বলে অভিযোগ করেন এ কে এম ফজলুল হক।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন করতে হলে তা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ডকে জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।একই সঙ্গে এ ফান্ডের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে কমিটি।এছাড়া এ মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ৮ হাজার জনবল নিয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় বৈঠকে।
দশম জাতীয় সংসদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ৮ম বৈঠকে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অর্থছাড় সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং এ ফান্ডের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন সভাপতিত্ব করেন।কমিটি সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, একেএম ফজলুল হক, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং মোছা: সেলিনা জাহান লিটা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।কমিটি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পের ডিজাইনে কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়টি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ডকে অবহিত করার জন্য সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীর ভাঙ্গন রোধকল্পে গৃহীত প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করারও সুপারিশ করা হয়।কমিটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনবল সংকট সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে। এছাড়া জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গৃহীত প্রকল্পসমূহ এবং গাইবান্ধা জেলার শাঘাটা বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্প এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাধীন দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের (বিওপি ক্যাম্পের নিকট) সাহেবের আলগা নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের উপরও বিস্তারিত আলোচনা হয়।বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।