গুলশানে-বিএনপির-রাজনৈতিক-কার্যালয়

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১১ মার্চ: হরতাল-অবরোধসহ ২০দলের ডাকা চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারে বিএনপিচেয়ারপারসনবেগম খালেদা জিয়াকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন চিকিত্‍সকের( সরকারপন্থী চিকিত্‍সকদের মধ্যে যারা জাতীয় সংসদ সদস্য) একটি প্রতিনিধি দল৷ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কর্মসূচি প্রত্যাহার না করলে প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেন তারা৷বুধবার দুপুর ১টার দিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত কার্যালয়ের সামনে যায়৷ এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সেখানেই অবস্থান নেন তারা৷উল্লেখ্য,গত ৫ জানুয়ারিতে সমাবেশ করতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে ওই দিন থেকেই সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ অবরোধের সঙ্গে চলছে দফায় দফায় হরতাল৷পাশাপাশি ৩ জানুয়ারি থেকেই গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া৷ তার দাবি সরকার তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে৷ অবশ্য এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সরকার জানিয়েছে, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি৷ তিনি যখন ইচ্ছা কার্যালয় থেকে েেবর হতে পারবেন৷

বুধবার অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে বেরিয়ে এসে সরকারপন্থি চিকিত্‍সকরা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান৷ বেলা ১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানের কাছে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা৷সংসদ সদস্য ও চিকিত্‍সক ডা. হাবিবে মিল্লাত স্মারকলিপি জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন- গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধে যে সহিংসতা চলছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা খালেদা জিয়ার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি৷তিনি আরো বলেন, আশা করি মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে তিনি বর্তমান চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন৷এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ডা. ইউনুস আলী সরকার, সাবেক স্বাস্থ্য আ ফ ম রহুল হক ও ডা. এনামুর রহমান প্রমুখ৷এ সময় বিএনপি চেয়াপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সারাদেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিনাবিচারে হত্যা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি স্মারকলিপি দিতে চিকিত্‍সকদের পরামর্শ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্ততার, দেখামাত্র গুলিসহ সরকারি নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে বলেন শায়রুল কবির৷

হরতাল অবরোধের নামে মানুষ হত্যা ও জ্বালাও- পোড়াও বন্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে তার মিডিয়া উইং কর্মকর্তার সঙ্গে উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন চিকিত্‍সক সংসদ নেতারা৷বুধবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিব-এ-মিল্লাতের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপিটি দেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আসেন৷ অনেকক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তার মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান স্মারকরিপিটি গ্রহণ করেন৷এর আগে খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য বনানী মাঠে জমায়েত হন চিকিত্‍সক সংসদের নেতারা৷ ওখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি নিয়ে ১০ জনের একটি দল স্মারকলিপি দিতে আসেন৷স্মারকলিপিটি দিতে গেলে গুলশান কার্যালয়ের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে শায়রুল কবির খান প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি একই স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন?প্রতু্যত্তরে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়,স্মারকরিপিটি আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দেইনি৷ কারণ এটি যেহেতু মানুষ হত্যা, জ্বালাও- পোড়াও বন্ধের দাবি জানিয়ে লেখা তাই বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়েছি৷ প্রধানমন্ত্রীকে দেবো সন্ত্রাস দমন করার দাবি সম্বলিত স্মরাকলিপি৷

এসময় শায়রুল কবির উচ্চস্বরে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন এমপি মিল্লাত ও চিকিত্‍সক প্রতিনিধিদের সঙ্গে৷ শায়রুল কবির উত্তেজিত কন্ঠে বলেন- আপনারা তো এখানে এসেছেন নাটক করতে৷ জনপ্রতিনিধি হয়ে এখানে নাটক না করে প্রধানমন্ত্রীকে আগে স্মরাকলিপি দিয়ে আসেন৷তখন সাংসদ মিল্লাত বলেন, আমরা নাটক করতে আসিনি৷ আমরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হরতাল-অবরোধ ও মানুষ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানাতে এসেছি৷ ২৪ ঘন্টার মধ্যে মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে স্মারকলিপি নয় সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে৷ বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর শায়রুল কবির খান স্মারকলিপিটি নিয়ে ভেতরে চলে যান৷পরে এমপি মিল্লাত সাংবাদিকদের বলেন,সারাদেশে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার জন্য চিকিত্‍সক প্রতিনিধি দল বেগম জিয়াকে স্মারকলিপি দিতে এসেছে৷ কারণ গণতন্ত্রকে হত্যা ও অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করতে খালেদা জিয়া ঘরের ভেতরে থেকে হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও- পোড়াও কর্মসূচি দিচ্ছেন৷আলটিমেটামের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান ডা. ইউনুস আলী৷কার্যালয়ের সামনে এসে তারা জানান,২০দলীয় জোট নেতা খালেদার কাছে হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান নিয়ে এসেছেন৷ সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে তারা খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি দিতে কার্যালয় ফটকে যান৷

কিন্তু ফটক ছিল বন্ধ, ভেতর থেকে মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার প্রথমে স্মারকলিপি নিতে অস্বীকৃতি জানান৷উল্টো আগতদের তারা বলেন, নাটক করবেন না৷ কেন নাটক করতে এসেছেন?’জবাবে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে হাবিবে মিল্লাত ও ইউনুস বলেন, নাটক মানে? নাটক কোনটা? আপনারা মানুষ পোড়াচ্ছেন, মানুষ মারছেন! এসব বন্ধ করেন৷ খালেদা জিয়ার কাছে আমরা স্মারকলিপি দিতে এসেছি, কিন্তু আপনাদের এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়৷মিডিয়া উইং সদস্যরা বলেন, আমরা সহিংসতা করছি না৷ আপনারা এই স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিন৷বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্মারকলিপিটি গুলশান কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়৷এরপর আলটিমেটামের ঘোষণা দেন ইউনুস আলী৷ তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার হয়তো মানসিক ভারসাম্য নেই৷ সেটাই স্বাভাবিক৷ কারণ তিনি স্বামী-সন্তানহারা, গৃহহারা অবস্থায় রয়েছেন৷ তার প্রতি আহ্বান থাকবে এসব সহিংসতা বন্ধ করুন৷ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, তারা (বিএনপি নেতারা) বলছেন সহিংসতা তারা করছেন না৷ তাহলে কর্মসূচি তুলে নিন, আমরা দেখবো কারা সহিংসতা করে৷

তিনি বলেন, আশা করি,খালেদা জিয়ার মানবতা জাগ্রত হবে৷ রাস্তায় এসে মিটিং-মিছিল করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে পারেন, কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে সহিংসতা করবেন না৷হাবিবে মিল্লাত বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি আহ্বান নিয়ে এখানে এসেছি, তারা বলছে নাটক করছি৷ আমরা নাটক করতে আসিনি৷ আমরা চিকিত্‍সক৷ সাধারণ মানুষের আগুনে পোড়া দেখতে চাই না৷ কোনো রাজনীতিকতো এ আন্দোলনে মারা যাচ্ছেন না৷ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে এ কেমন রাজনীতি?সহিংসতা’ বন্ধে সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই বলে দাবি করেন এই নেতারা৷তারা বলেন, কোথায় ব্যর্থ? প্রতিদিন কোনো না কোনো জঙ্গি ধরা পড়ছে৷ সরকার এ বিষয়ে শতভাগ সফল৷এর আগে বনানী মাঠে একটি সমাবেশ করেন এই নেতারা৷ সমাবেশ শেষে উপস্থিত সবাই খালেদার কার্যালয় অভিমুখে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এরপর এ ১০ সদস্যকে আসতে দেওয়া হয়৷গুলশান সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে ও’বিএনপি চেয়ারপারসন সম্বোধন করে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে৷ এতে জ্বালাও- পোড়াও বন্ধে আহ্বান জানানো হয়েছে৷