দৈনিকবার্তা-হাটহাজারী ১১ মার্চ: এখনও টিকে আছে এমনটা জানান দিতে কোন প্রকার কর্মসূচি ছাড়াই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবীদার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামে ইসলাম রক্ষার অন্দোলনে স্বচ্ছার সংগঠনটি আয়োজন করেছে সংবাদ সম্মেলনের। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তথা ওই সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় হেফাজত দূর্গ বলে খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রসা সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ আহামদ শফী অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে পারেনি। তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচির আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য হেফাজত আমিরের পক্ষে পাঠ করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। হেফাজতের উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশের চলমান রানৈতিক সংঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ, সাম্প্রতি ক্রসফায়ারে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত, পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সকল মাদ্রাসা ও মসজিদে নিয়মিত দোয়ার এন্তেজাম করা সহ তাদের (হেফাজত) পূর্ব নির্ধারিত চট্টগ্রামের বিভাগের দুইটি স্থানে অনুষ্ঠিতব্য শানে রেসালাত সম্মেলন দিনক্ষন ঘোষণা করেন।
লিখিত বক্তব্যে হেফাজত নেতারা বলেন, সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষে অচল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলীয় বিভেদে সৃষ্ট হানাহানির আগুনে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম, শহর ও রাজধানীসহ পুরো জনপদে। দুই পক্ষের মারামারিতে দেশ আজ মহাবিপদে পড়েছে। খুনাখুনি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কথিত ‘বন্দুক যুদ্ধে’, ক্রসফায়ারে এবং পেট্্রল বোমা হামলায় জীবন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। গুম করা হচ্ছে জ্বলজ্যান্ত মানুষদের। যত্রতত্র লাশ পড়ে আছে। মসজিদের দুজন নিরীহ নিরপরাধ ইমামকে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। বিরোধী আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্মমতা ও নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আজ চরমভাবে বিপন্ন। পথে-ঘাটে মানুষ নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের মানসম্মান ধুলায় মিশে যাচ্ছে। দেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনাও অন্ধকার হয়ে পড়েছে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে ভিন্ন দিকে ফেরানোর জন্য নতুন করে নিরীহ আলেমসমাজ ও কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়িয়ে কথিত অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার নাটক তৈরি করে জঙ্গিবাদের কল্পকাহিনী সাজানো হচ্ছে বলে দাবী করে বলেন, একশ্রেণির চিহ্নিত মিডিয়া ও একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর যৌথ কারসাজিতে এর আগেও অসংখ্যবার এমন অপপ্রয়াস আমরা লক্ষ করেছি। জঙ্গিবাদের জিগির তুলে তারা দেশের আলেমসমাজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কলঙ্কিত করতে এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করতে নানা ধরনের ফলস ফ্ল্যাগ অভিযান ও নাটক বানিয়ে থাকে। বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোকে ‘জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’ বলে অপপ্রচারণা এবং সময় বুঝে হঠাৎ করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পুলিশের অভিযানপূর্বক কথিত জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ও কোরআন-হাদিস সম্পর্কিত সাধারণ ইসলামী বইসমূহকে ‘জিহাদী বই’ বলে মিডিয়ায় উপস্থাপনÑএর সবই দেশের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র; এতদসত্ত্বেও দেশের কোনো কওমী মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদের দীক্ষা ও ট্রেনিং দেওয়া হয়Ñএমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আদৌ কেউ দেখাতে পারেনি। সুতরাং দেশের আলেমসমাজ ও মাদ্রাসা শিক্ষাকে কলুষিত করার অব্যাহত ষড়যন্ত্র বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়া বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী মুরতাদ ও নাস্তিক মন্ত্রী রয়েছে এমনটা দাবী করে আরো বলেন, যারা ইসলামী বিধিবিধান ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষপ্রসূত মন্তব্য ও বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামের মৌলিক ফরজ বিধান পর্দা বা হিজাব পরাকে কটাক্ষ করে ইতোপূর্বে মূর্খ সমাজকল্যাণমন্ত্রী ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। ‘সুদে’র মতো আল্লাহ প্রদত্ত হারাম বিধানকে অবৈধ নয় বলে ফাসেক অর্থমন্ত্রী পবিত্র কোরআনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে উপর্যুপরি আঘাত করে তারা আলেমসমাজ ও তৌহিদি জনতাকে ক্ষিপ্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। এদেরকে প্রতিরোধ করা আমাদের সকলের ঈমানি দায়িত্ব। এইসব ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমরা দেশের সর্বস্তরের ওলামা-পীর-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
হেফাজতের কর্মসূচী :
রাজনৈতিক সহিংসতা ও ক্রসফায়ারে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত এবং পেট্রল বোমার আগুনে দগ্ধ ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সকল মাদ্রাসা ও মসজিদে নিয়মিত দোয়ার এন্তেজাম করা।দেশের সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য কামনায় সকল মাদ্রাসা ও মসজিদে কুনুতে নাজেলা পড়ার ব্যবস্থা করা। আগামী ৯ ও ১০ এপ্রিল, ২০১৫ চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে দুই দিনব্যাপী শানে রেসালাত সম্মেলন এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ, ২০১৫ কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে দুই দিনব্যাপী শানে রেসালাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন: সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মুঈনুদ্দিন রূহী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ, মাওলানা মুনীর আহমদ, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা আহমদুল্লাহ, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা মোহাম্মদ, মাওলানা কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী গতকার মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েলে তাকে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে (প্রবর্তক মোড়স্থ সিএসসিআর) ভর্তি করানো হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি ওই ক্লিনিকের ৭ম তলায় ৭০৭নং ব্যাডে নিউরোসার্জন ডা: হাসানুর জামানের তথ্যবধানে রয়েছে বলে জানান হেফাজত আমিরের তনয় ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস আল মাদানী। তিনি আরো জানান, তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেগ তার চিকিৎসা চলছে। আমিরের মাথার সিটি স্ক্যান করানোর পাশাপাশি বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষ করানো হয়েছে বলে তিনি জানান।