দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০মার্চ : প্রায় ৫ হাজার টাকা কমে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির(আরএডিপি) আকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা ৫০ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সভা সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়। এতে প্রায় বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ সংশি¬ষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, সংশোধিত এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন, বিদ্যুৎ শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বাস্তবায়নের ধীর গতির কারণে প্রতিবছরের মতো এবারও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কাঁচি চালিয়েছে সরকার, বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়েছে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।
অর্থবছরের আট মাসের মাথায় মূল এডিপি থেকে পাঁচ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে, যদিও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বার বার শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের আশার কথা শুনিয়েছিলেন।সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সংশোধিত এডিপির মধ্যে ৫০ হাজার ১০০ কোটি টাকা আসবে স্থানীয় মুদ্রায়। আর বিদেশি সহায়তা হিসাবে পাওয়া যাবে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও মুস্তফা কামাল জানান। যেসব মন্ত্রণালয় ভালো করেছে, সংশোধিত এডিপিতে তাদের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার যারা খারাপ করছে, তাদের অর্থ কমানো হয়েছে।চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয় ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন আশানুরুপ না হওয়ায় এডিপির আকার বরাবরের মতোই কমিয়ে আনা হয়।
তবে এডিপির পুরো বাস্তবায়নের জন্য অর্থবছরের শুরু থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন মন্ত্রী। মাঠে কাজের গতি দেখতে বেশ কিছু বড় প্রকল্প পরিদর্শনের পাশাপাশি সব প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে একাধিক সভাও করেছিলেন। কিন্তু এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসেনি খুব একটা।গত ৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, রাবার দিয়ে মুছে নয়, কম্পিউটারে ক্লিক করে নয়, যথাযথভাবেই শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করা হবে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও পূর্বসূরিদের মতো এডিপি কাটছাঁটের পুরোনো পথে হাঁটতে হলো।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূল এডিপির ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হার প্রতিবারের মতোই ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি জানান, সংশোধিত এডিপিতে পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বিশে¬ষণে দেখা যায়, ৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা কমানোর পর গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা।এর আগেরবার, অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা।সেবার ২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।২০১১-১২ অর্থবছরে কাটছাঁট হয়েছিল ৪ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। তখন সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছিল ৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মূল এডিপির ৩২ শতাংশ বাস্তবায়িংত হয়েছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।তথ্য বিশে¬ষণে দেখা যায়, গত অর্থবছর (২০১৩-১৪) জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির ৩৩ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছর এডিপির ৩৮ শতাংশের বাস্তবায়ন হয়েছিল। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে ওই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৪ শতাংশ।২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরুতে মোট এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই- ফেব্র“য়ারি) এসে প্রায় ৫ হাজার টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ হলো ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সংশোধিত এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭২ হাজার কোটি টাকা। তবে বৈঠকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দাবি ও চাহিদার আলোকে আর ৩ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে করে এডিপি’র মোট আকার দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা।সভা শেষে মন্ত্রী আরও বলেন, বাড়তি ৩ হাজার টাকা জিওবি খাত থেকে মেটানো হবে। সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের চাহিদা বাস্তবায়নের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গতবছর ৬০ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি ছিল সেখান থেকে বেড়ে এবার ৭৫ হাজার কোটি টাকা হলো। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই এই বরাদ্দ দেওয়া হলো এটা আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন।’ চলতি অর্থ বছরের (২০১৪-১৫) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ১৭টি খাতের মধ্যে পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে অবহেলিত খাত গণসংযোগ, যোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান খাত। এ তিনটি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ সবচেয়ে কম।সভা সূত্র জানায়, এবার আরএডিপি’র মোট আকার ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতকে।
সভা সূত্র আরও জানায়, পরিবহন খাতের সড়ক পরিবহনে চার হাজার ২শ’ ৯২ কোটি, সেতু খাতে আট হাজার ৫শ’ ৬৫ কোটি এবং রেলওয়ে, নৌ ও বিমান পরিবহনে বরাদ্দ চার হাজার ১শ’ ৭৬ কোটি টাকা। পরিবহনের তিন খাত মিলিয়ে ১৭ হাজার ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এর পরেই রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। এতে মোট আট হাজার ৬শ’ ৬৩ কোটি। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে আট হাজার ৩শ’ ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।চলতি অর্থবছরে আরএডিপি’র মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা ৪৭ হাজার ১শ’ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি খাতের তিনটিসহ মোট ৮টি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পল¬ী উন্নয়ন ও পল¬ী প্রতিষ্ঠানে সাত হাজার পাঁচ কোটি, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ছয় হাজার ৮শ’ ৪৪ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে চার হাজার ৭শ’ ৪২ কোটি, বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে চার হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি এবং কৃষি খাতে চার হাজার ১শ’ ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।তবে ১৭টি খাতের মধ্যে সব থেকে অবহেলিত খাত গণসংযোগ, যোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান। শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে সংশোধিত এডিপি- তে মাত্র ৪শ’ ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে যোগাযোগ খাতে ৭শ’ ৪৪ কোটি ও গণসংযোগ খাতে মাত্র ১শ’ ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এছাড়া পানি সম্পদ খাতে দুই হাজার ৮৯ কোটি, শিল্পখাতে এক হাজার ৮শ’ ৬৪ কোটি, তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে এক হাজার ৭১ কোটি, ক্রীড়া খাতে ১শ’ ৬৭ কোটি, সমাজকল্যাণ খাতে ৪শ’ নয় কোটি, জন প্রশাসন খাতে এক হাজার ৭শ’ এক কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরুতে মোট এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এসে প্রায় আট হাজার টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৭২ হাজার কোটি টাকা।পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এটা অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশোধিত এডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এডিপি’র আকার ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর আগে এ পরিমাণে এডিপি’র আকার ধরা হয়নি। যে কারণে এবার সংশোধিত এডিপি-তে এর পরিমাণ কমতে পারে। কোন কোন খাতে কত খরচ হয়েছে সেই বিষয়টা দেখা হচ্ছে। আগামি ১০ তারিখে এনইসি সভায় এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।