দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ মার্চ: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অবিস্মরণীয় জয়ে বিজয় মিছিলের জন্য ১২ ঘণ্টা শিথিল রাখার পর চলমান হরতাল কর্মসূচি শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই হরতাল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ১৩ মার্চ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হলো।
এছাড়া আগামী ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার সারাদেশের সকল জেলা, উপজেলা,পৌরসভা ও থানা পর্যায়ে এবং দেশের সকল মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণমিছিলকর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দেওয়া হয় বিবৃতিতে।আরো বলা হয়, ইতোমধ্যে সরকার গণদাবি মেনে না নিলে আমরা আবারো আগামী ১৫ মার্চ রোববার থেকে দেশব্যাপী হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তিকেই আহবান জানাচ্ছে।নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্দুকের নলের মধ্যেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজছে। কম গণতন্ত্র, উন্নয়ন বেশী এবং আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র ইত্যাদি আইয়ুব খান মডেলের আওয়ামী চর্চায় দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দু’টোই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তিকেই আহবান জানাচ্ছে বলেও বিবৃতিতে দাবি করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, দেশের সচেতন মহল বিশ্বাস করে-আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতা ও দু:শাসন প্রলম্বিত করার লক্ষ্যেই জঙ্গিবাদের জুজু’র ভয় দেখাচ্ছে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে। দেশে জঙ্গিবাদের কৃত্রিম জন্মদাতাই আওয়ামী লীগ। জনগণের সাথে প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কুমানসে আওয়ামী লীগ এখন প্রতিদিনই জঙ্গিবাদের টেস্টটিউব বেবী’র জন্ম দিচ্ছে। দেশের জনগণকে জুলুম নির্যাতনের আওয়ামী বন্দিশালা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই চলমান গণআন্দোলন বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষে আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্দুকের নলের মধ্যেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজছে। কম গণতন্ত্র, উন্নয়ন বেশী এবং আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র ইত্যাদি আইয়ুব খান মডেলের আওয়ামী চর্চায় দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দু’টোই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পাকিস্তানী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের উত্তরসূরী হিসাবে মুজিব কন্যাকে গণ্য করার চাইতে ইতিহাসে বড় কোন ট্র্যাজেডি খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নত গণতন্ত্রই টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সুবিধাবাদী, সর্ববিনাশী, একনায়কত্ববাদী আওয়ামী রাজনীতির অপচর্চা জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করছে।
তিনি বলেন, গত রোববার গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পিয়ারুল ইসলামের বাড়ী থেকে বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ এবং একই দিনে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিনের বাড়ী থেকেও পেট্রোল বোমা ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। জনগণ জানে এবং বোঝে-দেশব্যাপী সকল পেট্রোল বোমা ও নাশকতার সকল নাটকই সরকার পরিচালিত ও প্রযোজিত।মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত রোববার রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে মিঠাপুকুরে নিয়ে পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করে জামায়াত নেতা শাহ নাজমুল হুদা লাবলুকে। আমরা এই জঘন্য হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সময়ের পরিবর্তনে উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারনে সরকারী বাহিনীর জুলুম-নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অধিকাংশ তথ্যই দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের অজানা থেকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচার বহির্ভুত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, গণগ্রেফতার, জুলুম নির্যাতন, মামলা-হামলা চালিয়ে সরকার প্রিয় মাতৃভুমিকে হানাদার বাহিনীর মতো অধিকৃত অঞ্চলে পরিণত করেছে। দেশের জনগণকে এই জুলুম নির্যাতনের আওয়ামী বন্দীশালা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই চলমান গণআন্দোলন বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনও পর্যন্ত সরকার গণদাবি মেনে না নেয়ায় আমরা পূণরায় একই দাবিতে অর্থাৎ অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে, দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবর্হির্ভুত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদেরকে গুম, খুন, অপহরণ, পঙ্গু ও আহত করার প্রতিবাদে, দেশব্যাপী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ নিরীহ তিনি বলেন, জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পূণ:রুদ্ধারের দাবিতে, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণের প্রতিবাদে, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ-হরতাল এবং আগামী বৃহস্পতিবারের গণমিছিল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উদাত্ত আহবান জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।