দৈনিকবার্তা-রংপুর, ১০মার্চ: রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে সাজর্ারী ও এ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের চিকিত্সকরা মুখোমুখি অবস্থান করছেন৷ এনিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন চিকত্সকরা৷ ব্যাহত হচ্ছে অস্ত্রোচপারের৷ এঅবস্থার সুযোগ নিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে৷ এ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদের চিকিত্সক সংকটে তাদের মধ্যে সম্বন্বয়ের অভাবে সেখানে এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সেখানকার কতর্ৃপক্ষের ধারণা৷ তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত নিস্পত্তির আশ্বাস দেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ৷
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩৮ বছর আগে ৬’শ বেডের রমেক হাসপাতাল চালু হওয়ার সময় অগর্ানোগ্রাম অনুযায়ী ১২টি এ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদ সৃষ্টি করা হয়৷ তখন শুধুমাত্র গাইনী ও সার্জারী বিভাগে অপারেশন থিয়েটার ছিল৷ কর্মরত ছিলেন ৫ জন এ্যানেসথেসিওলজিস্ট ৷ এখন এক হাজার বেড সৃষ্টি হওয়ার পর অপারেশন থিয়েটার বেড়ে ৮টি হয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে হলো যথাক্রমে, জেনারেল সাজর্ারী, ইউরোলজি, অর্থো সাজর্ারী, গাইনী, নাক কান গলা, নিউরো সাজর্ারী, বার্ন ও প্লাষ্টিক সাজর্ারী, এবং চক্ষু৷ অথচ একই জনবল দিয়ে এখনও এ্যানেসথেসিওর কাজ সারানো হচ্ছে৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ২ হাজারেরও বেশি রোগী থাকছে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যনত্ম ২৪ ঘন্টায় সেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬২৭ জন৷ ভর্তি হয়েছিল ৩০৬ জন৷ মারা গেছে ১২ জন৷ এর মধ্যে ৫০ জনের অস্ত্রপচার করা হয়েছে৷ এবাবেই সেখানে বাড়ছে রোগী ও অস্ত্রপচারের সংখ্যা৷ সেখানকার কতর্ৃপক্ষ জানায়েছেন, হরতাল অবরোধ না থাকলে ২ হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে থাকে৷ অস্ত্রপচারের সংখ্যাও আরো বেড়ে যেত৷
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ্যানেসথেসিওলজিস্ট সংকটে সার্জারী ও এ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের মধ্যে সম্বন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে৷ রোগীদের সময়মত এ্যানেসথেসিয়া দিতে না পারায় অস্ত্রপচারেও ঘটছে ব্যাঘাত৷ এসুযোগে দালাল চক্রের সদস্যরা সেখান থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে সাজর্ারী বিভাগের চিকিত্সকদের দাবি৷ এনিয়ে চলছে তাদের মধ্যে স্নায়ুবিক ঠান্ডা লড়াই৷ এঅবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সাজর্ারী বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মরত ১৪ জন মেডিখেল অফিসার ও সহকারী রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষরিত একটি স্মরকলিপি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দেওয়া হয়েছে৷ এতে তারা এ্যানেসথেসিওলজিস্ট অপ্রতুলতা ও সার্জারী বিভাগের অপারেশন আয়োজনে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন৷ এতে তারা বলেছেন, জরুরী অপারেশনের ক্ষেত্রে সময় মত এ্যানেসথেসিওলোজি না পাওয়া, নিয়মিত অপারেশনের ক্ষেত্রে এ্যানেসথেসিয়া পেতে প্রায় দেরি হয়ে থাকে৷ সকাল ১০টার আগে অপারেশন শুরু করা যায়না, দুপুর ১টার পর তাদের এ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হচ্ছেনা, রাতে অনেক সময় শুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টার মধ্যে এ্যানেসথেসিয়া পাওয়া যাবে৷ তবে এনিয়ে এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিত্সকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছ্বে৷ এদের মধ্যে রয়েছেন এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ডা. সদরুল ইসলাম তালুকদার, ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস, ডা. বিশ্বজিত্ বর্মন, ডা. ওয়াহেদা চৌধুরী প্রমূখ৷ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান তারা৷
সূত্র মতে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে রমেক হাসপাতালে জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অধিদপ্তরের ডিজি, সাবেক রাষ্ট্রপতি জাাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ ও রমেক হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল কাদের খানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন৷ ওই বৈঠকে রমেক হাসপাতালে সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দেওয়া হয়েছ্বে৷
রমেক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল কাদের খান সার্জারী বিভাগের চিকিত্সকদের স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, এ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদের চিকিত্সক সংকটে তাদের মধ্যে সম্বন্বয়ের অভাবে সেখানে এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ পরিচালক বিষয়টি নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷