দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ১০ মার্চ: কুল চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছিল ঠাকুরগাঁওয়ের বেকার যুবক মেহেদী আহসানসহ অনেকেই। গত মৌসুমগুলোতে এখানকার উৎপাদিত কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী সহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ায় ভালো লাভ পাওয়ায় অনেকেই কূল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছিল। কিন্তু অব্যাহত হরতাল-অবরোধে তাদেরকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে তারা বিপাকে পড়েছেন। ফলে কূল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেক কৃষক।
লাভজনক হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছিল কুল চাষের জন্য। ইতোমধ্যে জেলায় ২ শতাধিক কুলের বাগানে আপেল কুল, বাউকুল, থাই কুল ও দেশীয় জাতের কূল জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। মওসুমের প্রতিদিনই এই সব বাগান থেকে সংগ্রহ হয় ১০ হাজার মণ কুল। গত মৌসুম গুলোতে বিঘা প্রতি খরচ বাদে চাষিরা লাভ করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। জেলার প্রায় ১শ’ হেক্টর জমিতে চাষকৃত কুল বাগানে ৪ শতাধিক শ্রমিকের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়। বাগানে কাজ পেয়ে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা পায় বলে জানায় বাগানে কর্মরত শ্রমিকেরা ।
গত মৌসুম গুলোতে কূলের ব্যবসা করে লাভের মূখ দেখলেও লাগাতার হরতাল অবরোধে পরিবহনের অভাবে এবার তারা ব্যাপক ক্ষতি শিকার করতে হচ্ছে বলে জানান ফলের ব্যবসায়িরা । সদর উপজেলার চামেশ্বরী গ্রামের কুলবাগানের মালিক মেহেদী আহসান এক একর জমিতে ৪ জাতের কুল চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তার বাগানে উৎপাদিত কুলের গুনগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদাও ছিল দেশ জুড়ে। বছরে তিনি বাগান থেকে মোটা অংকের লাভ পেয়ে সংসারের কাজে ব্যবহার করতেন। গত মৌসুমে তিনি যে মূল্যে কুলের বাগান বিক্রি করেছিলেন এবার লাগাতার হরতাল অবরোধের কারণে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়েছে বলে তিনি জানান ।
মেহেদী হাসানের কূল চাষে ব্যাপক লাভ দেখে ইতোপূর্বে অনেকে নতুন বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও চলতি মৌসুমে কুল চাষের ক্ষতি দেখে আগহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। নারগুর গ্রামের কুলচাষী আব্দুল্লাহ হক জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। এতে তাঁর মোট খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। অবরোধ ও হরতালের কারণে গাড়ি জেলার বাইরে যেতে চায় না। গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে তাঁদের। তা ছাড়া কুলের দামও কমে গেছে। অপরদিকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের ফুটপাতে হকাররাই এসব কুল বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু বোমা হামলার আশঙ্কায় হকাররা ফুটপাতে বসতে পারছেন না। তাই সেখানে কুলও বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে অনেক কৃষক গাছ থেকে কুল পাড়ছেন না। এ অবস্থায় গাছেই কুল পেকে নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে ৬০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন সেই কুল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬/৭ টাকা কেজি দরে।
প্রতি মৌসুমে অসংখ্য পাইকারি ব্যবসায়ী কুল কেনার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে আসতেন। কিন্তু এবার অবরোধ ও হরতালের কবলে পড়ায় অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসাযীরা আসতে পারছেন না। ফলে কুল উৎপাদন মৌসুমের শুরু থেকেই অবরোধ-হরতাল শুরু হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকেরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে পানির দামে বিক্রি করছেন কুল। চাষিরা জানান, তাঁরা কুল চাষের জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু কুল বিক্রি না হওয়ায় সেই ঋণের টাকা ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে কুল বিক্রি করে শ্রমিকের হাজিরার টাকাও জোগাড় করা যাচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, গত মৌসুমগুলোতে ব্যাপক ভাবে চাষকৃত ও উৎপাদিত কূল জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়েছিল এবং কৃষক ভালো লাভ পেয়েছিল । কিন্তু এবার দেশের পরিস্থিতির কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও জোড়দার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশ্যা চাষীদের।