দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ মার্চ: দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আড়াল করতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের জিকির তুলে আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করতে চায় বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার এক বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের তরফে এক বিবৃতিতে এ দাবি করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংকটকে আড়াল করতেই আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের জিকির তুলে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করতে চায়।পাশাপাশি দেশকে পুলিশি রাষ্ট্র অভিহিত করে জনগণ আইন-আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে বলেও দাবি করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।এছাড়া ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৩টিরও অধিক মামলায় তাকে কোনদিন হাজিরাও দিতে হয়নি, মোকাবেলাও করতে হয়নি; নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থার কল্যাণে তাকে সকল মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আওয়ামী মন্ত্রী-এমপি’দের বিরুদ্ধে দুদকের আওতাধীন সকল অভিযোগ ও মামলায় দায়মুক্তি সনদ প্রদানের হিড়িক পড়েছে। তিনি বলেন, হলফনামার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের স্বঘোষিত দুর্নীতির খতিয়ান দেশের জনগণ ও সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছেন; অথচ তাদেরকেও পুতপবিত্র চরিত্রসনদ প্রদান করেছে দুদক সরকারি প্রভাবে। আমরা আগেও বলেছি-শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন কামনা করা যায় না। বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা তিরোহিত হয়েছে অনেক আগেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দন্ড ঘোষনা করেছেন গতকালের প্রকাশ্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রী। আইন-আদালত, বিচার ব্যবস্থার কোন কার্যকারিতা এরপরে আর অবশিষ্ট থাকেনা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশনে দাখিলকৃত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি’দের স্বঘোষিত দুর্নীতির খতিয়ান দেশের জনগণ ও সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছেন; অথচ তাদেরকেও পুতপবিত্র চরিত্রসনদ প্রদান করেছে দুদক সরকারী প্রভাবে। আমরা আগেও বলেছি-শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন কামনা করা যায় না। বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা তিরোহিত হয়েছে অনেক আগেই। তারপরেও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা আইনিভাবেই মোকাবেলা করা হবে।সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দোলনকারী জনগণের লাশের স্তুপ মাড়িয়ে সারাদেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রানান্তকর কুৎসিত অপচেষ্টায় বাংলাদেশ নামক এই জনপদ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ভয়ঙ্কর এই পুলিশী রাষ্ট্রে জনগণ আইন-আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। গণতন্ত্রের শরীরে এতো রক্তপাত জনগণ ইতোপূর্বে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি।
তিনি বলেন, স্পষ্টত:ই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তুমুল বিতর্কিত ও নিবন্ধিত প্রায় সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত এবং বিবর্জিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটকে জঙ্গীবাদের সমস্যা হিসেবে বাজারজাত করার ভাংগা ক্যাসেটটি আওয়ামী লীগ বাজিয়েই যাচ্ছে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি ও ২০ দল ঐতিহাসিকভাবে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ভুয়া নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক মহাদুর্যোগের দায় দেশের জনগণ নিবে না। সেই ভুলের খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। রাজনৈতিক সংকটকে আড়াল করতেই আওয়ামী লীগ জঙ্গীবাদের জিকির তুলে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শাসকগোষ্ঠীকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-যুক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না। র্যাব, পুলিশ, বিজিবিকে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে গণহত্যার হুকুম দিয়ে তার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী নিজের কাঁধে তুলে নিলেও এরজন্য দায়ী কেউই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবেনা। অতএব, স্বৈরতান্ত্রিকতা, একনায়কতান্ত্রিকতা পরিত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে আসুন। দেশকে বাঁচান, মানুষ বাঁচান এবং নিজেরাও বাঁচার চেষ্টা করুন।এছাড়া সম্প্রতি দিনাজপুর এবং ফেনীতে এক বিএনপির নেতা পুত্র এবং ছাত্রদল নেতার পিতার মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ তার পুত্র রেজওয়ানুলকে গুলি করে হত্যা করে; স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে গুলিবিদ্ধ করে। ফেনীতে ছাত্রদল নেতা আরিফকে গ্রেফতার করতে গিয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মফিজুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে যৌথবাহিনী।সালাহউদ্দিন এ সময় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোককে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।