roundদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ মার্চ: বিশ্ব কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করে ৬০ শতাংশ কিডনী বিকল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব৷তারা শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশসহ সার্কভূক্ত দেশসমূহে সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিলে যেখানে শতকরা ৫ ভাগ কিডনী বিকল রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিত্‍সা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করে এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব৷তারা বলেন, এ জন্য অর্থের দরকার হয় না বরং প্রয়োজন শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন ও তা নিয়মিত চর্চা করা দরকার৷

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কিডনী এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস), বিশ্ব কিডনী দিবস-২০১৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনী, প্রয়োজন গণসচেতনতা’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে৷বক্তারা এ রোগের ভয়াবহতা বিবেচনায় রেখে তা প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দেশব্যাপী বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান৷

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উলেস্নখ করেন, বিশ্বব্যাপী আজ কিডনী রোগ সংশিস্নষ্ট সকলে উপলব্ধি করতে পারছে যে, চিকিত্‍সা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রশমন করতে হবে৷ আর এজন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়৷বক্তারা বলেন, কিডনী রোগ প্রতিরোধে আনত্মর্জাতিকভাবে আজ ৮টি স্বর্ণালী সোপান কঠিনভাবে অবলম্বনের তাগিদ তৈরি হয়েছে এই ৮টি পন্থা হল, কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুপ্ত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত রক্তচাপ পরীৰা করা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন না করা, নিয়মিত কিডনীর কার্যকারীতা পরীৰা করা৷

প্রখ্যাত আইনজীবী ও সমাজসেবক ব্যারিস্টার রফিক উল হক, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ডেইলি সানের সম্পাদক মোঃ জামিলুর রহমান, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেএম আই গ্রুপ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস এসোসিয়েশন এর ডিরেক্টর মোঃ আব্দুল মান্নান, নিকডুর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, অধ্যাপক ডা. গোলাম মইন উদ্দিন, ডা. সাকাওয়াত হোসেন গোল টেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন৷

বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কিডনী রোগের চিকিংসা ব্যয় সহনীয় করার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই৷ তিনি এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রত্যনত্ম এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষেদের কথা বিত্তবানদের ভাবতে হবে৷

ক্যাম্পাস, সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এ গোল টেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন৷ মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ বলেন, বিশ্বব্যাপী কিডনী রোগীদের নিয়ে চিনত্মার ধরণ আজ বদলে গেছে৷ এখন কিডনী বিকল রোগীদের চিকিত্‍সার চেয়ে গুরম্নত্ব পাচ্ছে কিডনী বিকল প্রতিরোধ করা৷ এর যুক্তিপূর্ণ কারণও আছে৷ দেখা গেছে গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের কিডনী রোগীদের চিকিত্‍সায় ব্যয় হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার যা আমাদের জাতীয় বাজেটের দ্বিগুণের চেয়েও বেশী৷ অন্য দিকে যুক্তরাজ্যের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শুধু কিডনী বিকল চিকিত্‍সায় যে অর্থ ব্যয় হয় তা যুক্তভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ত্বকের ক্যান্সার চিকিত্‍সার চেয়েও অনেক বেশী৷ এতে সহজেই বুঝা যায় যে, কিডনী বিকল কতটা ভয়াবহ৷ কিডনী বিকলের ফলে যে শুধু্ একটা মানুষের অকাল মৃতু্য হয় তা নয়৷ বরঞ্চ পুরো পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়৷ তাই এই ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধের জন্য আজ বিশ্ব তত্‍পর৷ আর সে কারণেই এবারের বিশ্ব কিডনী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনী’৷

তিনি বলেন দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগের প্রধান কারণ হলো-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, গ্লমারেলো নেফ্রাইটিস, প্রস্রাব প্রবাহে বাধাজনিত রোগ, বয়স্ক পুরুষদের প্রষ্ট্রেট বড় হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের নালী সরম্ন হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের যত্রতত্র ঔষধের ব্যবহার, যাদের ওজন বেশী, যারা ধুমপান করে, যারা কম কায়িক পরিশ্রম করে তাদের মাঝেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগের প্রবনতা অনেক বেশী৷এ বছরের বিশ্ব কিডনী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় সবার জন্য সুস্থ কিডনী৷ উন্নত বিশ্বেই কিডনী রোগ চিনত্মাতীত ভাবে অনেক বেশী৷ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই হার আরো অনেক বেশী৷ কিডনী রোগ প্রতিরোধে গবেষকগণ নির্দেশিত ৮টি স্বর্নালী পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়৷