দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ মার্চ: চলমান সঙ্কট সমাধানে দেশে নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি না তা যাচাই করতে গণভোটের কথা বললেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক৷শনিবার সকালে জাতীয় সেক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক পেশাজীবী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন৷ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে৷
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- বিকল্প ধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল হক, ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আক্তার হোসেন প্রমুখ৷সমাবেশে রফিক-উল হক সরকারের উদ্দেশে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যদি বির্তকিত না হয়ে থাকে, তাহলে এখন নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কি না তা যাচাই করতে একটি গণভোট দিন৷ তাহলেই সব সমস্যার সমাধান চলে আসবে৷৫ জানুয়ারির ২০ দলীয় জোটের অংশ ছাড়া নির্বাচনের পর থেকেই হরতাল-অবরোধে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ সঙ্কট কাটাতে বন্ধু রাষ্ট্রের কূটনীতিকসহ অনেকেই সরকার এবং বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটকে বিভিন্ন আহ্বান জানিয়েছেন৷
এ সময় রফিক-উল হক বলেন, এ পক্ষ বলছে, ও পক্ষ বলছে, একটা মিডটার্ম ইলেকশন (মধ্যবর্তী নির্বাচন) দেয়া দরকার৷ আর এই সরকারের যারা চ্যালা আছে তারা বলছে, ২০১৯ সালের আগে ইলেকশনের স্বপ্ন দেখবেন না৷ আমার একটা প্রস্তাব হচ্ছে যে, মিডটার্ম ইলেকশন হবে কি হবে না, এর ওপরে একটা রেফারেন্ডাম (গণভোট) করেন৷ যে ইয়েস, অর নো৷ যদি রেফারেন্ডামে ইয়েস হয়- করবেন, যদি নো হয়- করবেন না৷ এই নিয়ে তর্ক করে ১৯ পর্যন্ত বসে থাকতে হবে আর আমাদের এইভাবে প্রত্যেকদিন আমরা একে অপরকে ক্রিটিসাইজ করব, এটা মানায় না৷সমাবেশের প্রধান অতিথি বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী জাতীয় সংকট নিরসনে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানান৷তিনি বলেন, আমরা চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ভোটের অধিকার…আমি যেটা সমর্থন করি প্রেসিডেন্টর অধীনে একটি জাতীয় সরকার সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে৷ প্রথম কথা হলো, যে সরকারটা গঠিত হবে, এটাকে গণতান্ত্রিক করতে হলে আপনাকে সংসদ সদস্যদের নিয়ে করতে হবে৷ যেহেতু বিগত নির্বাচন ভ্যালিড নয়, আইনের চোখে, আমাদের চোখে৷ সেহেতু তার আগের নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের নিয়ে এই সরকার গঠিত করতে হবে৷ ওই যে নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার হবে সেই সরকার একটি নির্বাচন কমিশন তৈরি করবে এবং সেটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে সবার কাছে৷…এই নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণ করার অধিকার দিতে হবে৷ কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয় মন্তব্য করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরো বলেন, এই কথাটা আজ যারা ক্ষমতাসীন এবং ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের উভয় পক্ষকেই বুঝতে হবে৷চলমান সংকট সমাধানে বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়াকে বন্ধু রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আরো তিনটি শর্ত জুড়ে দিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷ শর্তগুলো মেনে নিলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷
সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বন্ধু রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা দেশের সংকট সমাধানে খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন৷ এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন রাষ্ট্রপতির অধীনে সবগুলো দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে অনর্্তবতীকালীন নির্বাচন’ প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন৷ কিন্তু আমি মনে করি বিএনপির চেয়ারপারসনের মেনে নেয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আরো তিনটি শর্ত যুক্ত করলে স্থায়ীভাবে চলমান সংকটের সমাধান হবে৷বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দেয়া ৩টি শর্তের প্রথম শর্ত- যেহেতু দশম জাতীয় সংসদ অবৈধ তাই নবম সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়েই রাষ্ট্রপতির অধীনে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে৷দ্বিতীয় শর্ত-গঠিত ওই জাতীয় সরকারে যারা থাকবেন তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷তৃতীয় শর্ত- জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পর তার প্রধান কাজ হবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়া৷
বি. চৌধুরী বলেন,দেশ এখন গণতন্ত্রের অপেক্ষায়৷ যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে, সেখানে কোনভাবেই গণতন্ত্র ধ্বংস করা যাবে না৷পেট্রোল বোমা মেরে সংহিসতা করাকে যেমন আন্দোলন বলা যায় না৷ ঠিক তেমনি বিচারবহির্ভূতভাবে একজন মানুষ হত্যা করাও গণতন্ত্রকেই হত্যা করা৷