দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ মার্চ: রোববার থেকে আবারো হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দেন।তার এ ঘোষণার ফলে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি দিন বা কর্মসদিবসে হরতাল পালনের বাস্তবতা তৈরি হলো।২০ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত হরতাল শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হবে।বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষে এক বিবৃতিতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক পরিবর্তনের জাতীয় আকাঙ্খা নিয়ে এবার পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারসহ গণতন্ত্রকে দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষ্যে। আইনের শাসন, মৌলিক ও মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার এই গণআন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়েই গণমানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
তনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একচেটিয়া ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ এখন জঙ্গীবাদের ফেরীওয়ালা সেজেছে। আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে জঙ্গীবাদের দোসর সাব্যস্ত করার জন্য বিএনপিকে আইএস, আল কায়দা, তালেবান, বুকোহারাম, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ইত্যাদির সাথে তুলনা করার কোরাশ গাওয়া অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতা-মন্ত্রীরা। অথচ ষড়যন্ত্রকারী অবৈধ সরকারের একের পর এক থলের বিড়াল বেরিয়ে যাচ্ছে।সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতারণা, ভন্ডামী ও খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ জনগণের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য জনগণের লাশকে পূঁজি করে টিকে থাকার ঘৃন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর জঘন্য কসরত করছে। পত্রিকার খবরে প্রকাশ-মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলার ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফয়াজ আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫৮৪টি বোমা উদ্ধার করেছে বিজিবি।
এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা বানানো ও বোমা হামলা চালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে বহু ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মী। যা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর জনগণ দেখেছে। জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ী থেকে ১৫৮৪টি বোমা উদ্ধারে প্রমান হয় আওয়ামী লীগই নাশকতা চালিয়ে বিরোধী দলের উপর দায় চাপানোর জন্য বোমা ও পেট্রোল বোমার গোডাউন তৈরী করেছে এবং সরকারই পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে নাশকতা ও হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছে ও বোমা হামলা চালাচ্ছে।তিনি বলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মান ক্ষুন্ন করে অবৈধ ক্ষমতায় টিকে থাকার এধরণের কুৎসিত আওয়ামী অপরাজনীতি এদেশের মানুষ ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেছে অনেক আগেই। প্রধানমন্ত্রী এবং তার নেতা-মন্ত্রীরা প্রায়ই তাচ্ছিল্যভরে বলে থাকেন-বিএনপি গোপন জায়গা থেকে বিবৃতি দিয়ে হরতাল-অবরোধ ঘোষণা দেয়। এ বিয়য়ে আমাদের বক্তব্য-ইন্টারনেটে ই-মেইলের মাধ্যমে সকল সময়ে যেভাবে দলীয় বিবৃতি-বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়ে থাকে, সেই একই প্রক্রিয়াতেই এখনও প্রদান করা হচ্ছে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-আপনারা কি প্রকাশ্য রাজনীতির কোন সুযোগ বিরোধী দলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন ? বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দিয়ে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জলকামান আর বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে কার্যত: গৃহবন্দী রেখে, সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ সকল শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়ে, গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে শুধুমাত্র বিচার বহির্ভুত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে পুলিশী রাজত্ব কায়েম করে ‘বাকশালতন্ত্র’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চান ? তা’হলে শুনে রাখুন- রক্তে কেনা স্বাধীনতা, রক্তে কেনা গণতন্ত্র এদেশের মানুষ রক্ত দিয়েই রাখবে। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শত সহ¯্র শহীদের রক্তদান বৃথা যেতে পারে না। এটাই পৃথিবীর সকল স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের ইতিহাস।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পূর্বেকার সকল মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে এখন তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারের ভয় দেখাচ্ছেন। বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে দলনের হাতিয়ারে পরিণত করে সরকার পুরো বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কার্যত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকেই সরকার জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ, আইন-আদালত, সংসদ ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে এদেশে জনগণের আন্দোলনকে কোন স্বৈরাচারই স্তব্ধ করতে পারেনি, এই অবৈধ সরকারও পারবেনা।মিথ্যা মামলায় একুশে টিভি’র নির্ভীক সাংবাদিক কনক সরোয়ারের গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবি করছি।তিনি বলেন, চলমান অবরোধ-হরতাল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালন করায় আমি বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি ।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চলমান গণআন্দোলনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের যেসমস্ত নেতা-কর্মী ও নিরীহ জনগণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। নিহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা ও সহানুভুতি। এছাড়া, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দাবী করছি।অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ সকল গণদাবি সরকার ইতোমধ্যে মেনে না নিলে আমরা আবারও আগামী ৮ই মার্চ ২০১৫ রোজ রোববার থেকে দেশব্যাপী হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ সকল গণদাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধসহ গণআন্দোলন অব্যাহত থাকবে।