দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ মার্চ: মাববতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামাকে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন করা হবে। বিষয়টি জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।বুধবার কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ কথা জানান।সকালে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আইনজীবীদের একটি দল কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন।তাজুল ইসলামসহ পাঁচ আইনজীবী বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন। কামারুজ্জামানের চার আইনজীবী শিশির মনির, নজিবুর রহমান, এহেসান এ সিদ্দিকী ও মতিউর রহমান আখন্দ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে তাজুল কারাফটকে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রিভিউ পিটিশনের বিষয়ে আলাপ করেছি। আগামীকাল সকালের মধ্যে তা দাখিল করব।
তাজুল বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের একটি কপি কামারুজ্জামানকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি তিনি পড়েছেন। রায়ে একজন বিচারক ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন, তার পয়েন্টগুলো ধরেই আমরা রিভিউ আবেদন করব।একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়। গতবছর আপিল বিভাগও তার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে।ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর গত ১৯ ফেব্র“য়ারি তার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক। এরপর মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে, কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়। আইন অনুযায়ী জামায়াতের এই নেতা সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের দিন থেকে যার সময় গণনা শুরু হয়েছে।
রিভিউ আবেদন করা হলে কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া থেমে যাবে। রিভিউ মীমাংসার পর যে সিদ্ধান্ত হয়, তা কার্যকর হবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রীসহ আইনজীবীরা। সম্প্রতি কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও দেখা করেছেন। তবে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি ছিল মাসিক নিয়মিত সাক্ষাতের একটি অংশ। আজ কামারুজ্জামানের সাঙ্গে আইনজীবীরা দেখা করেছেন রিভিউ প্রসঙ্গে আইনি বিষয় নিয়ে।সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী অ্যাডভাকেট তাজুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামান তার আপিলের সম্পূর্ণ রায় পড়েছেন। কামারুজ্জামান আমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বলেছেন- আপিল বিভাগের যে পাঁচ বিচারপতি রায় ঘোষণা করেছেন, সে রায়ে বিচারপতিদের মতভেদ ছিল।
তিনি বলেন, কামারুজ্জামান বলেছেন- একজন বিচারপতি আমার (কামারুজ্জামানের) রায়ে (ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়) ঘটনার সব সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে রায় দিয়েছেন। তিনি আমাকে (কামারুজ্জামান) ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডসহ অন্য সাজা থেকে খালাসের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অন্য বিচারপতিরা ট্রাইব্যুনালের রায়ের সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা করেন নাই। এমনকি তারা ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি কম পড়েই আমার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন, পর্যালোচনা না করেই আমাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। তাই আমি আমার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করবো। রিভিউ করলে আমি খালাস পাবো।আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিব মোমন বলেন, আমরা আজ প্রায় আধঘণ্টা সময়ব্যাপী কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলেছি। কামারুজ্জামান তার রায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রিভিউ করতে বলেছেন।এর আগে আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এর পরেরদিন বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। পরে ২১ ফেব্র“য়ারি অ্যাডভোকেট তাজুলের নেতৃত্বে পাঁচ আইনজীবী কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফাইড কপি পেয়েছে তার আইনজীবী। এর আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয়। বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত ১৮ ফেব্র“য়ারি পূর্নাঙ্গ রায়ে এ বেঞ্চের বিচারপতিগণ স্বাক্ষর করেন। ৫৭৭ পৃষ্ঠার এ পুর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা গত ১৯ ফেব্র“য়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও প্রেরণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ঢাকার জেল সুপার ফরমান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।