দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা ও ব্লগার রাফিদা বন্যার ওপর হামলা চালানো দুর্বৃত্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে দায়দ্বায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদী ছাত্র শিক্ষক ও নাগরিকদের ব্যানার থেকে এ দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে এ হামলার জন্য মৌলবাদী শক্তির তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততাকে দায়ী করা হয়। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এ হামলা মুক্তচিন্তার ওপর বড় আঘাত। এ আঘাত মোকাবিলায় মুক্তচিন্তার সব মানুষকে সংগঠিতভাবে মাঠে নামতে হবে।
সমাবেশে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও মৌলবাদী শক্তির বিচার অসমাপ্ত রাখায় দেশে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ দুই-তিন স্তরের নিরাপত্তার কথা বলে। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা কোন স্তরে থাকে, তারা তা জানে না।সাংবাদিক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশ প্রগতিশীল চিন্তার বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।মানবাধিকার নেত্রী হামিদা হোসেন বলেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের অনেক কাছেই পুলিশ ছিল। এত কাছে থেকে তারা কী করছিল, সে প্রশ্ন আমাদের করতে হবে।গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী বলেন, দেশে হত্যার রাজনীতির মধ্য দিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে চায় আর কেউ ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু হত্যাকারীর বিচার কেউ করে না। রাজনীতির এই হত্যার খেলার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত হতে হবে।
ব্লগার ও লেখক পারভেজ আলম বলেন, এই পুলিশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের শাহবাগে দাঁড়াতে দেয় না। ছবির হাট উঠিয়ে দেয়। নানা অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মুক্তচিন্তার ওপর হামলাকারী খুনিদের ধরতে পারে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরতে না পারলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।অভিজিতের হত্যাকারী ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। অপরাজেয় বাংলার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।
এদিকে, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের হোতা ও পরিকল্পনাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ।শুক্রবার দুপুরে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ব্লাগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এ দাবি জানান।সকাল ১০টায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে এই গণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। অভিজিতের হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইমরান।তিনি বলেন, যারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে তারা আত্মস্বীকৃত মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী। এই জঙ্গিরা অভিজিৎ রায়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছিল। মর্মান্তিকভাবে তাকে খুনও করা হল, অথচ হত্যাকারী ও হোতারা এখনও গ্রেপ্তার হচ্ছে না।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পাশাপাশি মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানান তিনি।ইমরান বলেন, একই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক শফিউল, ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার অভিজিৎকেও হত্যা করা হল। অথচ হত্যাকারী জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো বিচার হচ্ছে না।অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় তারা আরও অপরাধ ঘটাতে উৎসাহিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।জড়িতরা খোলাখুলি হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সময়সীমাও বেঁধে দিচ্ছে কখন কাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
অথচ সামান্য অপরাধে মুক্তিচিন্তার মানুষদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অভিযোগ করে ইমরান বলেন, এই একচোখা নীতিই মৌলবাদীদের প্রসারের কারণ।…যত দিন যাচ্ছে তত শক্তিশালী হচ্ছে এই অপশক্তি।এই পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।এখনই যদি আমরা সেচ্চার না হই, তাহলে আর কোনও দিনও ঘুরে দাঁড়াতে পারব না। এদিকে, লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার দায় আনসার বাংলা-৭ নামের একটি সংগঠন স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমানের ভাষ্য, আনসার বাংলা -৭ নামের একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছে। ব্লগার রাজীব, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছিল, এবারের ধরনটাও একই ধরনের।
শুক্রবার বেলা একটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় এ বিষয়ে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব আমাদের কাছে এখনো না এলেও আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি।ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সময় ধরে হিসাব করা মুশকিল। প্রতিটি ঘটনা আলাদা। প্রতিটি ঘটনার প্যাটার্ন আলাদা। তদন্তের কার্যক্রম আলাদাভাবে গণ্য। লোকজন অনেক সময় আলাদা হয়। ভিকটিমও আলাদা। আমরা কাজ করছি, সময় ধরে বলা যাবে না। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এর পেছনে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে।
ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহ করে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও কাঁধে ঝোলানো একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি চাপাতির হাতল কাগজে মোড়ানো ছিল।অভিজিৎ রায়ের প্রতি আগামী রোববার শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে রাখা হবে। দুপুরে এ কথা জানান অভিজিৎ রায়ের ছোট ভাই অরিজিৎ রায়ের স্ত্রী কেয়া বর্মণ। কেয়া বর্মণ বলেন, শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অভিজিৎ রায়ের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে গবেষণার জন্য দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদীরাই লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে বলে মনে করছে তার পরিবার।এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন তার বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায়।মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করা হয়েছে বলে শাহবাগ থানার এসআই সোহেল রানা জানিয়েছেন।মামলা দায়েরের পর থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের অজয় রায় বলেন, আমার ছেলেকে হত্যার জন্য উগ্র জঙ্গিবাদীরাই দায়ী। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত।বর্তমান সরকার খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ, যিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লিখতেন। লেখালেখি নিয়ে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।
হামলায় তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।অভিজিৎ ও বন্যার ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু বের করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে দুটি চাপাতি পাওয়া গেছে।২০০৪ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিবাদীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।অভিজিৎকে হত্যার পরেও অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উগ্রবাদীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফারাবী সাইফুর রহমানের নাম আলোচনায় এসেছে।
ফারাবী অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন অভিযোগ করে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আসা একটি কমেন্ট রেশয়ার করা হচ্ছে।অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে, একজনকে উদ্দেশ করে ওই কমেন্টে বলা হয়েছে।বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট রকমারি ডটকম থেকে অভিজিৎ রায়ের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন এর আগে হত্যাকাণ্ডে উসকানিদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার ফারাবী।শাহবাগ আন্দোলনের মধ্যে ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ফেইসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফারাবীকে। পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি।
এদিকে অভিজিৎকে হত্যার পর আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে বিজয় হিসেবে দাবি করা হয়েছে।প্রথম টুইট করা হয়েছে রাত ১২টার দিকে, যাতে বলা হয়েছে, আল্লাহু আকবর.. বাংলাদেশে আজ একটি বিশাল সাফল্য। টার্গেট ইজ ডাউন..পরের টুইটে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর একটি ছবি শেয়ার করে বলা হয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসলামবিরোধী ব্লগার আমেরিকান বাঙালি অভিজিৎ রায়কে রাজধানী ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে।হামলার পর মাটিতে লুটিয়ে থাকা অভিজিতের পাশে তার স্ত্রীর রক্তাক্ত একটি ছবি শেয়ার করে এক্সক্লুসিভ! শিরোনামের এক টুইটে বলা হয়েছে, এটা স্বামীর মাথা ধরে থাকা অভিজিৎ রায়ের রক্তাক্ত স্ত্রী। শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে। গত তিন থেকে চার বছর ধরে সে শীর্ষ টার্গেটে ছিল।বিজ্ঞানমনস্ক অভিজিৎ লিখতেন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর ছিল তার লেখা।
অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।অভিজিৎ রায়ের মাথার ডান পাশে অত্যন্ত দক্ষ হাতে হিংস্রভাবে’ ধারাল অস্ত্রের তিনটি কোপ দিয়েছিল খুনি, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার এই লেখকের মৃত্যু হয় বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন। হামলার এই ধরন এর আগে কয়েকটি জঙ্গি হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে গলা থেকে দেহের ঊর্ধ্বভাগ অর্থাৎ মাথাই ছিল আক্রমণকারীদের লক্ষ্যবস্তু।অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস এবং ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের ওপরও একই কায়দায় হামলা হয়েছিল, যেসব ঘটনায় জঙ্গিদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একুশে বই মেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন সড়কে হামলার শিকার হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।তারা দুজনেই মৌলবাদবিরোধী লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অভিজিতের। গুরুতর আহত হয়েছেন রাফিদা আহমেদ বন্যাও।শুক্রবার অভিজিতের লাশের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, অভিজিত রায়ের মাথার পেছন দিকে ডান পাশে তিনটি গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল, যেগুলো করা হয়েছে চাপাতির মতো কোনো ধারাল অস্ত্র দিয়ে।একটি আঘত থেকে আরেকটি আঘাতের দূরত্ব আধা ইঞ্চি; সবগুলোই সমান্তরাল। ওই আঘাত এতোই মারাত্মক ছিল যে চামড়া ও হাড় কেটে একবারে মগজে পৌঁছেছে। এছাড়া পিঠে ও বাঁ চোখের ভ্রুর কাছে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
মূলত মাথার পেছনে তিনটি আঘাতের প্রচণ্ডতা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষণেই অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে বলে এই চিকিৎসকের ধারণা।তিনি বলেন, এটি খুব দক্ষ হাতের কাজ। কোথায় মারলে মানুষ মারা যায়, সেটা হামলাকারীরা জানে। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও হিংস্র ছিল। তিনটি আঘাত করেছে আধা ইঞ্চি ব্যবধানে, একটি আরেকটির ওপর পড়েনি।পরিকল্পনা, দক্ষতা আর হিংস্রতা ছাড়া এভাবে মানুষ হত্যা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন সোহেল মাহমুদ। ময়নাতদন্তের আগে লাশের সুরতহাল করেন শাহবাগ থানার এসআই সুব্রত গোলদার।তিনি জানান, অভিজিতের মাথার পেছনে আঘাতগুলোর মধ্যে একটি তিন ইঞ্চি ও অন্যটি ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। দুটোই প্রায় দুই ইঞ্চি গভীর।এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজয় রায়, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের আসামি করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখালেখির জন্য অভিজিৎকে আগে থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উগ্রবাদীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফারাবী সাইফুর রহমানের নাম আলোচনায় এসেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর।‘আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।