দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: সেনা অভ্যুত্থানে প্ররোচনার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার হুমকি পরোয়া করি না।শুক্রবার রাজধানীর আরামবাগে গণফোরাম কার্যালয়ে দলটির বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল এ কথা বলেন।এ সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কথোপকথন বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান ড. কামাল।সামরিক অভ্যুত্থান প্ররোচণার চেষ্টায় সহযোগিতা করেছেন এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার দাবি করে ড. কামাল বলেন, এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা।রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাকে ভয় পান না মন্তব্য করে তিনি চলমান সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বানও জানান।বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক পাতায় মাহমুদুর রহমান মান্নার সহযোগী হিসেবে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় আরোহন করতে চান।
এ সময় একে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে উল্লেখ করে ড. কামালকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।আর এ অভিযোগকে ড. কামাল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে অবিহিত করেছেন।এর আগে তিনি তার বক্তব্যে বর্তমানে রাজনীতিতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে মন্তব্য করে বলেন, বন্দুকের জোরে ক্ষমতা আকড়ে থাকা এবং সহিংসতা চালিয়ে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।গত ২২ ফেব্র“য়ারি নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিএনপি নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কথোপকথন ফাঁস হয়। অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনে মান্না বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে, সেনা বিদ্রোহের উসকানি দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে এসে আমাকে দেশদ্রোহিতার কথা শোনানো হলে, এটা আমার জন্য লজ্জার। দেশের জন্য লজ্জার, যিনি বলেন তাঁর জন্যও লজ্জার।ড. কামাল হোসেন বলেন, একজন বলেছে দেশদ্রোহিতার জন্য আমার বিচার করা হোক। পাকিস্তানও আমার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার বিচার করেছিল, বিএনপিও করেছিল কেয়ারটেকার সরকারের দাবি করায়। এরশাদও করেছিল।দেশদ্রোহিতার কথা শোনানোকে আমি পরোয়া করি না।কে এ ধরনের হুমকি দেখাবে? প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, এ ধরনের কথা যারা বলে, তাদের ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। ওনার মতো মানুষের এ ধরনের কথা বলা শোভা পায় না। এটা ছেলেমানুষের কথা। কিছু না জেনে, না বুঝে বলেছে।
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ অস্বাভাবিক ব্যবস্থায় রাখতে পারে না। দেশে যা হচ্ছে, তাকে সুস্থ রাজনীতি বলা যাবে না। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা সুস্থ রাজনীতি নয়। এটি এক ধরনের রোগ। গুম-হত্যা করে রক্ষা পাওয়া যাবে না।ড. কামাল বলেন,পেট্রলবোমাসহ সব ধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধেই তাঁর দল কথা বলে। বোমা মেরে গুটিকয়েক মানুষকে মেরে ফেলা যায়। ১৬ কোটি মানুষকে মারা যায় না।এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই, উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, সভ্য সমাজে আলাপ আলোচনা করেই সমাধান করা হয়। আর আলোচনা শুধু বড় দুটি দলের মধ্যে নয়, সব রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও করতে হবে।সভায় অন্যদের মধ্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি মফিদুল ইসলাম খান, সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল আজিজ ও তবারক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।