বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের হরতাল ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত হরতাল চলবে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।এর আগে ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার হরতাল শেষ হবে বুধবার সকাল ৬টায়।

বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত অবৈধ সরকার গণদাবিকে গ্রাহ্য না করায় আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি পুনরায় আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হলো। এছাড়া একই দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি চলমান অবরোধ-হরতাল এবং আগামী বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা ও নির্যাতন, নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে এ কর্মসূচি চলছে।

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিবৃতিতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো ভয়াল ঘাতকের ভুমিকায় অবতীর্ণ। অবৈধ সরকার দু:শাসন টিকিয়ে রাখতে সমগ্র দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। সরকারী গুপ্তঘাতক পেটোয়া পুলিশ-র‌্যাব বাহিনী প্রতিনিয়তই বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বসতবাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার পর রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে, খালে-বিলে, ক্ষেতে-খামারে লাশ ফেলে রেখে গ্রেফতারের দায়িত্ব অস্বীকার করছে।

তিনি বলেন, ঢাকার মিরপুর ও ঝিনাইদহে ৬ জনের অসংখ্য গুলিবিদ্ধ লাশের ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও পুলিশ বলছে-তারা গণপিটুনিতে মারা গেছে। নিহতদের পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী কয়েকদিন আগেই পুলিশ তাদের বিনা কারণে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় পরিবারের সাথে তাদের টেলিফোনে কথা হয় এবং তাদের কাছে পুলিশ টাকাও দাবী করে। মিরপুর ১০ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহবায়ক আবদুল ওয়াদুদকে গ্রেফতারের পর বন্দুকযুদ্ধের সাজানো নাটকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন দুলাল ও গোলাম আজম পলাশকে ডিবি পুলিশ কয়েকদিন আগেই গ্রেফতার করে গতকাল ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যার পর লাশ উপজেলার ডেফোলবাড়িয়া মাঠে ফেলে রেখে যায় এবং গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে।তিনি আরো বলেন, মিরপুরের নিহত অপর তিনজন জুয়েল, সুমন ও রবিনের গায়ে ৫৪টি গুলির চিহ্ন পাওয়ার পরও পুলিশের দাবী গণপিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বরাবরের মতো এই সকল জঘন্য গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সময়ের পট পরিবর্তন হলে এইসব গণহত্যায় দায়ী ব্যক্তিদেরকে বিচারের জন্য উপযুক্ত আদালতের আওতায় আনা হবে।

এই জনপদের মানবতার শত্রু, গণহত্যাকারী, গণতন্ত্রের আততায়ী অবৈধ আওয়ামী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-জনগণের ব্যালটের অধিকার বুলেটের মাধ্যমে কেড়ে নিয়ে ক্ষমতার উত্তাপে অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হবে না।প্রজাতন্ত্রের সকল সম্মানিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাই-বোনদেরকে আহবান জানাই-আপনারা জনগণ এবং রাষ্ট্রের সেবক হিসাবে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন। কোন ব্যক্তি বা দলের অবৈধ ইচ্ছা বা আদেশ পালনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হবেন না। জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে বিজাতীয় শত্রুর মতো আচরণ করবেন না। ভাইয়ের বুকে গুলি চালাবেন না।সালা উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদী একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়ে প্রিয় মাতৃভুমিকে দাসানুদাসে পরিণত করার আওয়ামী ষড়যন্ত্র থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার কোন বিকল্প নাই।

তিনি বলেন,অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে, দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবর্হির্ভুত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদেরকে গুম, খুন, অপহরণ, পঙ্গু ও আহত করার প্রতিবাদে, দেশব্যাপী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পূণ:রুদ্ধারের দাবিতে, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণের প্রতিবাদে, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এবং এখনও পর্যন্ত অবৈধ সরকার গণদাবীকে গ্রাহ্য না করায় আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি পূনরায় আগামীকাল বুধবার সকাল ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হলো।

তিনি অঅরো বলেন, চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের যেসব নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। নিহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা। গণআন্দোলনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ, দেশ রক্ষার এই সংগ্রামে জনতার বিজয় অনিবার্য বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন।