24-02-15-PM-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: সন্ত্রাস দমনে সরকারের অবস্থান পরিস্কার-সেই আদর্শকে সামনে রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে এগিয়ে যেতে হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রশ্নে সরকার কাউকেই ছাড় দেয়নি,দেবেও না-এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ মানুষের ভাগ্যোদয়ই সরকারের মূল লক্ষ্য।তিনি বলেন, দেশের সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার ঘটিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি অর্জন সশস্ত্র বাহিনীর যেকোন অফিসারের জন্যই গৌরবের বিষয় বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এ প্রশিক্ষণ আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্রে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে,– বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের সম্পদ সীমিত। আর সে সীমিত সম্পদ দিয়েই একটি যুগোপযোগী, দক্ষ ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই।এ লক্ষ্য অর্জনে উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য যা যা করার দরকার তার সরকার সবই করবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে চাই।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকার প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ— উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্ব নিরাপত্তায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা ও মাত্রিকতা।সশস্ত্র বাহিনী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বলে আশা করেন তিনি।দশি-বিদেশি ২১৪ জন সামরিক কর্মকর্তাকে এ ডিগ্রি দেয়া হয় । বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সকল প্রকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে এগিয়ে যেতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

24-02-15-PM-4বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান এবং সমমর্যাদার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- মূলমন্ত্র স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং সকল প্রকার সস্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আর সে আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এ সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশ ও জণগনের সেবায় আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলায় ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন।

দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ এবং অন্যান্য জাতিগঠনমূলক কাজে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছে। শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্রে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ¦ল করার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে এখন যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা ও বহুমাত্রিকতা। সুতরাং সশস্ত্র বাহিনীর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও পরিবর্তিত সময়ের এই চাহিদার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন।সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের এই স্টাফ কলেজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ জন্য আমরা গর্বিত।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৩৯টি, নৌ বাহিনীর ৩৩টি এবং বিমান বাহিনীর ৩৫টি স্টাফ কোর্স সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৮৬০জন কর্মকর্তাও এ কলেজ থেকে কোর্স শেষ করে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বাহিনীর দেশি-বিদেশি ২১৪ জন কর্মকর্তাকে সনদ প্রদান করেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ১২০ জন, নৌবাহিনীর ২৩ জন, বিমানবাহিনীর ১৯ জন এবং চীন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নাইজেরিয়াসহ ২২টি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ৫২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।বাংলাদেশের ১২ জন নারী কর্মকর্তাও সনদপত্র পেয়েছেন।গ্র্যাজুয়েট সনদ পাওয়া কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে পেশাগত জীবনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তিসহ দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারবো ইনশাল্লাহ।অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়ংা বার্নিকাট, তিন বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।