দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যও চলতি অর্থবছর (২০১৪-১৫) শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে থাকবে। এমনকি এটা সাড়ে ৬ শতাংও হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।মঙ্গলবার হোটেল পূর্বানীতে আইএফআইসি ব্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিকাশে নতুন আর্থিক সেবা আইএফআইসি কৃষি-শিল্প’ চালু উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্যাংকটি।
গভর্নর বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর যে সম্পদ রয়েছে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশের সমান। ২০০৯ সালে এটি ছিল ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলো ২০ শতাংশের উপরে সম্পদ অর্জন করেছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আতিউর রহমান বলেন,গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্যে মফস্বলভিত্তিক শিল্প স্থাপনে পুনঃঅর্থায়ন স্কীম’ নামে ২০০১ সালে এক’শ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ তহবিল চালু করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে দুই’শ কোটি এবং ২০১৩’র জুলাই মাসে চার’শ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।বর্তমানে ৩৭টি কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে এ তহবিলের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পর্যায়ে দেয়া অর্থায়নের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার কৃষিভিত্তিক শিল্পে ৬৪২ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। যার ৮২ শতাংশই দেয়া হয়েছে মেয়াদি ঋণ হিসেবে। এসব কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
গভর্নর বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক জানিয়েছে, তারা কৃষি খাতের উন্নয়নে ৩টি এসএমই সেবা ‘কৃষি শিল্প’, প্রান্ত নারী’ ও ‘সূবর্ণ গ্রাম’ চালু করতে যাচ্ছে। আজকের এ অনুষ্ঠানেই তারা ২১ জন কৃষি শিল্প উদ্যোক্তার মাঝে ২০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকটির এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী। এ সেবাগুলো দেশের কৃষিভিত্তিক শিল্প উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক যদি এ ঋণ বিতরণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা চায়, তাহলে সেটি ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ দুটি খাতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের সমর্থনে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গভর্নর আরও বলেন, চলতি বছর ব্যাংকগুলো ১ লাখ তিন হাজার ৫৯২ কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত বছরের বিতরণ করা এসএমই ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১০ কোটি। আর গত পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলো ৩ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণ দিয়েছে। যার মধ্যে নারী উদ্যোক্তা প্রায় ৫ শতাংশ।
এসএমই খাতের নারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নারী উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করেছে। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবা দিতে গঠন করা হয়েছে নারী উদ্যোক্তা ইউনিট। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ আলম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সিরডাপের মহাপরিচালক ড. সেসেপ ইফেন্দি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমারসহ আইএফআইসি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন কৃষি শিল্প ও নারী উদ্যোক্তারা।