unnamed-6 unnamed-6

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: ভাষা আন্দোলনের জন্য এদেশের অসংখ্য মানুষ ১৯৫২ সালে অকাতরে জীবন দিয়েছেন। আজ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জন্য আমরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুত। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি অতীতে যেমন বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি, তেমনি আজও কোন ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবেনা। একুশে বই মেলার আয়োজক কমিটির বীরত্বপূর্ণ এ ঘোষণার পর পরই বই মেলায় উপস্থিত তরুন, যুবকসহ সকল বয়সের হাজার-হাজার নারী-পুরুষেরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করার দিপ্ত শপথ গ্রহণ করেন। ফলশ্র“তিতে পাঁচ দিনব্যাপী একুশের বই মেলার চতুর্থ দিনে গতকাল মঙ্গলবার অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন বইপ্রেমি ও দর্শকদের উপস্থিতিতে পুরো মেলা প্রাঙ্গণে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলোনা। ঘটনাটি বরিশালের উত্তর জনপদের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণের।

চলমান অবরোধ ও হরতালে নাশকতাকারীদের পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় পাঁচজন নিহতের পর বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে আতঙ্কের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পায় গৌরনদী উপজেলা। সর্বশেষ ওই উপজেলার মাহিলাড়া নামক এলাকায় গত ৭ ফেব্র“য়ারি চলন্ত ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পর পুরো মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। বিশেষ করে অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পরে গত দু’বছর থেকে মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাঁচ দিনব্যাপী একুশে বইমেলা। অবশেষে মেলা উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়নবাসী অতীতের ন্যায় একুশে বইমেলা আয়োজনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে তাদের প্রাণের দাবি উপস্থাপন করেন। চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও ইউনিয়নবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সাংসদ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ একুশে বইমেলার মাধ্যমে আতঙ্কের জনপদ মাহিলাড়ায় শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে আনার জন্য তার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতার ঘোষণা করেন।

সেমতে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজের যৌথ উদ্যোগে বেশ স্বল্প সময়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে তৃতীয় বছরের ন্যায় পাঁচ দিনব্যাপী একুশে বইমেলার গতকাল চতুর্থদিন অতিবাহিত হয়েছে। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় সাংবাদিক খোকন আহম্মেদ হীরার প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘হৃদয়ে একুশ’ নামের স্মরণিকা। মেলায় ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনির ৩০টি বইয়ের স্টলের পাশাপাশি স্থানীয় কবি ও সাহিত্যিকদের আরো ১০টি বইয়ের ষ্টল বসেছে। সাথে রয়েছে মিডিয়া সেল, লেখক আড্ডা, ডিজিটাল কর্ণার ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্রের স্টল। মেলার তৃতীয়দিন পর্যন্ত ১২টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্ময়ে প্রত্যেহ আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত মেলাস্থলে সকল বয়সের হাজার-হাজার বইপ্রেমীদের উপস্থিতিতে নাশকতার আতঙ্ক কেটে আজ মাহিলাড়ায় বইছে একুশে বইমেলার শান্তির সুবাতাস।

চতুর্থদিনে “আমরা তোমাদের ভুলবো না” মঞ্চে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইসাহাক আলী সরদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বরিশালের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. হানিফ। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, গৌরনদী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম জহির, মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া, আসাদুজ্জামান রিপন। আজ সমাপনী দিনের “নিশি বুঝি ভোর হলো” মঞ্চে আলোচনা সভায় উপাধ্যক্ষ মিয়া মো. আকবর আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, মাহিলাড়া ইউনিয়নের সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানের কারণে সর্বদলীয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন পূর্বের আতঙ্কিত মাহিলাড়ায় এখন একুশের বইমেলা উপলক্ষ্যে সর্বস্তরের বইপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। এজন্য তিনি (চেয়ারম্যান) ইউনিয়নবাসীর পাশাপাশি আইনশৃঙললা রক্ষা বাহিনীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।