দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: অবশেষে এই বিশ্বকাপে জেগে উঠলেন দানব ক্রিস গেইলে। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে উদ্বোধনী এই ব্যাটসম্যানের রেকর্ড গড়া দ্বিশতকে বড় জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয়ে অবদান আছে শতক করা মারলন স্যামুয়েলসেরও।গেইলের দ্বিশতক ও স্যামুয়েলসের সঙ্গে তার বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটির সুবাদে রানের পাহাড় গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরু থেকে দ্রুত রান সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানে হারে জিম্বাবুয়ে।মঙ্গলবার ক্যানবেরার ম্যানুকা ওভালে বি গ্র“পের ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেটে ৩৭২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডেতে এটি তাদের সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৪ উইকেটে ৩৬৩ রান। গত বছরের জানুয়ারিতে হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই রান করেছিল তারা।জিম্বাবুয়ে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বৃষ্টি নামে। আবার খেলা শুরু হলে ৪৮ ওভারে ৩৬৩ রানের নতুন লক্ষ্য পায় তারা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৪ ওভার ৩ বলে ২৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটাই ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। ৪৬ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় তারা।ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গে ৮০ ও ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গে ৫১ রানের দুটি জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন শন উইলিয়ামস। জ্যাসন হোল্ডারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৭৬ রান করেন তিনি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ৬১ বলের ইনিংসটি গড়া ৯টি চারে।অর্ধশতকে পৌঁছে বিদায় নেন আরভিনও। ৪১ বলে ৫২ রান করে গেইলের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার বিদায়ের পর স্টুয়ার্ট মাটসিকেনিয়ারি ও এল্টন চিগুম্বুরা দলকে তিনশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান।ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেরোম টেইলর ও হোল্ডার তিনটি করে উইকেট নেন।এর আগে টিনাশে পানিয়াঙ্গারার করা প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান ডোয়াইন স্মিথ।
মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ফিরে যেতে পারতেন গেইল। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদন থেকে বেঁচে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। রিভিউ নেয় জিম্বাবুয়ে, তাতে আম্পায়ার স্টিভ ডেভিসের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।শুরুতে টাইমিংয়ে গড়বড় হচ্ছিল গেইলের। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দেখেশুনে খেলে উইকেটে থিতু হয়ে পাল্টা আক্রমণে যান এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। শুরু থেকেই গেইলকে সহায়তা দিয়ে যান স্যামুয়েলস। শেষ দিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান পান অষ্টম শতক।১৭তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে একবার জীবন পান স্যামুয়েলস। তখন দলের রান ছিল ৭৩, স্যামুয়েলস ব্যাট করছিলেন ২৭ রানে। পরের ওভারেই অর্ধশতকে পৌঁছান গেইল। ৫১ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে এবারের আসরের প্রথম অর্ধশতক পান তিনি।
৩৬তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের ২২তম শতকে পৌঁছান গেইল। দ্বিতীয় অর্ধশতক পেতে আর ৫৪ বল খেলেন তিনি। অর্থাৎ ১০৫ বলে শতক করেন গেইল। তিন অঙ্কে পৌঁছানোর পথে ৫টি করে ছক্কা ও চার হাঁকান তিনি।পানিয়াঙ্গারার করা ৪০ তম ওভারে পরপর দুই বলে ক্যাচ দেন গেইল। প্রথমবার ‘নো’ বলের কল্যাণে আর পরের বার ফ্রি হিটের সৌজন্যে বেঁচে যান তিনি।৩৫ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৬৫ রান। গেইল ঝড়ে শেষ ১৫ ওভারে ২০৬ রান সংগ্রহ করে তারা।দ্বিতীয় শতকে পৌঁছাতে মাত্র ৩৩ বল খেলেন গেইল। তার শেষ অর্ধশতকটি আসে মাত্র ১২ বলে। ৯টি চার ও ১৬টি ছক্কার সাহয্যে বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতকে পৌঁছান গেইল।বিশ্বকাপে এর আগের সর্বোচ্চ ছিল গ্যারি কারস্টেনের অপরাজিত ১৮৮ রান।
১৯৯৬ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এই রান করেছিলেন তিনি।শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২১৫ রান করেন ম্যাচ সেরা গেইল। এই ইনিংস খেলার পথে ব্রায়ান লারার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নয় হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন গেইল।গেইলের ১৪৭ বলের ইনিংসটি ১৬টি ছক্কা ও ১০টি চার সমৃদ্ধ। এই ইনিংসের সুবাদে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে ভারতের রোহিত শর্মা ও দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের সর্বোচ্চ ছক্কা মারার বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি।ইনিংসের শেষ বলে গেইলের বিদায়ে ভাঙে ৪৯.৪ ওভার স্থায়ী ৩৭২ রানের জুটি। ওয়ানডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটির কৃতিত্ব এখন এই দুই জনের। আগের রেকর্ডটি ছিল ভারতের শচিন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের। ১৯৯৯ সালে হায়দরাবাদে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩১ রান তুলেছিলেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ১৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন স্যামুয়েলস। তার ১৫৬ বলের ইনিংসটি গড়া ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায়। এটি তার সর্বোচ্চ, তার আগের সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ১২৬ রান।এদিকে, স্মরণীয় এক ইনিংস দিয়ে জিম্বাবুয়েকে রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েছেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে বিশ্বকাপের স্মরণীয় এক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই তারকা প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। তার করা ২১৫ রানের ইনিংসে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইকেটে ৩৭২ রানের বিশাল সংগ্রহ জমা করেছে।খেলা শেষে গেইল বলেন, এ সময় আমি প্রচুর চাপে ছিলাম। আমি কোনভাবেই রান পাচ্চিলাম না। এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। বিপুলসংখ্যক লোক চাইছিল আমি রান করি। এ জন্য আমি আমার টুইটারেও এ সংক্রান্ত অনেক ক্ষুদে বার্তা পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের কিছু দিতে পেরে স্বস্তি বোধ করছি।
অথচ ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছিল গেইলের। যদি রিভিউ’র ফলাফল তার পক্ষে না যেতো তাহলে হয়তো নতুন এ ইতিহাস রচনা করতে পারতেন না তিনি। তিনাসে পেনিয়াংগারার প্রথম ওভারে করা অসাধারণ বোলিং আক্রমণ এ সময় অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল ক্যারিবীয়দের। তিনি ওভারের দ্বিতীয় বলে স্মিথকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানোর পর চতুর্থ ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন গেইলকে। শেষ পর্যন্ত রিভিউর সহায়তায় এই যাত্রায় বেঁচে যান গেইল। প্যাডে লাগা বলের বিপরীতে জিম্বাবুইয়ানদের জোরালো আপীল প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস। পরে তারা রেফারেলের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু রিপ্লেতে বলটির গতি স্ট্যাম্পের উপরের দিকে থাকায় টিভি আম্পায়ার গেইলের পক্ষে মত দেন।গেইল বলেন, আমার একটি সুযোগের প্রয়োজন ছিলো। সেটি পাওয়ার পর আমি সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করে নিয়েছি। রান সংগ্রহের সময় আমি কিছুটা চাপে ছিলাম। আমি টুইটার এবং মোবাইল মারফত আমার সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচুর ক্ষুদে বার্তা পেয়েছি। এতো বেশী লোক আমার কাছ থেকে যে কিছু প্রত্যাশা করছিল আগে আমি বুঝতে পারিনি। প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পেরে আমি খুশি।