দৈনিকবার্তা-হাটহাজারী, ২০ ফেব্রুয়ারি: বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার শান্তির জনপদ বলে খ্যাত হাটহাজারীর সুস্বাধু উপাদেয় খাদ্য ‘চালের জিলাপি’র সুখ্যাতি রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য সহ সারাদেশ জুড়ে। শীত মৌসুমে চালের জিলাপির কদর বেড়ে যায় বলে উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে লোভনীয় এ মিষ্টান্ন খাদ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। মৌসুম ভিক্তিক ব্যবসা বলে মনে হলেও এ সাধারণত চালের জিলাপি বিক্রি করে উপজেলার অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করে চলছে কয়েক যুগ ধরে।
জনশ্র“তি রয়েছে, চালের জিলাপির সর্ব প্রথম প্রচলন হয় হাটহাজারীতে। স্মরানাতীত কালে এ জিলাপি উপজেলার সরকারহাট বাজারে জৈনক এক চা দোকানী তৈরী করত। মৌসুমের সময় লোভনীয় এ খাদ্য ক্রয় করতে এ দোকানে ভীড় তৈরী হত। এ সময় মানুষের হাতে বর্তমানের মত টাকা পয়সা ছিল না। কিন্ত এ খাদ্যের লোভ সামলাতে না পেরে অনেকে টাকা পয়সা ছাড়া ও ধান কিংবা চাল দিয়ে জিলাপি বিকিকিনি করত। কথিত চা দোকানির জিলাপি বিক্রি বেড়ে গেলে তিনি একজন দৈনিক বেতনে মানুষ রেখে জিলাপি তৈরীর কাজে থাকে প্রশিক্ষন দেন। সেখান থেকে অনেকে দেখে উপজেলার বিভিন্নহাট বাজারে চালের জিলাপি তৈরীর কাজ শুরু করে। এমন কি অনেকে বাড়িতে ও জিলাপি তৈরী করে সকালে বাড়ি বাড়ি ফেরী করে বিক্রি করে আয় উপার্জনের কাজে লেগে য়ায়। এতে করে তাদের মৌসুমের সময় বাড়তি আয় ও হত।
জিলাপি সাধারনত ময়দা দিয়ে তৈরী করে। ক্ষেত্র বিশেষে ময়দার দাম বৃদ্ধি পেলে আটা মিশ্রিত করে চিনির শিরায় ভিজিয়ে মিষ্টি করে জিলাপি তৈরী করা হয়। চালের জিলাপিটা চাল গুড়া করে গুড়ের শিরায় ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। একেকটা জিলাপির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। এখন ডিজিটাল মিলিং মেশিনে জিলাপি তৈরীর জন্য চাল গুড়া করা হয়। প্রথম যখন চালের জিলাপি তৈরীর কাজ শুরু হয় তখন মিলিং মেশিন ছিলনা। সে সময় এনালগ পদ্ধতিতে ঢেকি কিংবা পাটায় চাল গুড়া করে জিলাপি তৈরী করা হত। চালের গুড়া গরম পানিতে মিশিয়ে খামি তৈরী করে তেলের মধ্যে সাইজ করে জিলাপি তৈরী করে সেখান থেকে গুড়ের শিরায় ভিজিয়ে মিষ্টি করে জিলাপি তৈরী করা হয়। হাটহাজারীর সরকারহাট বাজার থেকে চালের জিলাপি তৈরীর পদ্ধতি শুরু হয়ে ক্রমে এ পদ্ধতি উপজেলার বিভিন্নহাট বাজারে পরবর্তীতে পার্শবর্তী উপজেলার বিভিন্নহাট বাজার ও দোকানে এমনকি সারা চট্টগ্রামে চালের জিলাপি প্রসিদ্ধি লাভ করে। বর্তমানে চালের জিলাপি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর ও হাটহাজারীর মত চালের জিলাপি কোন স্থানে তৈরী করতে পারেনা। প্রতি কেজি চালের জিলাপি ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
নতুন বেয়ায় বাড়ী তথা ছেলে মেয়ের শ্বশুর বাড়ীরতে বেড়াতে যাওয়ার সময় মৌসুমী চালের জিলাপি নাস্তা হিসাবে না নিলে নানা মুখী কানা গুসা চলে। এমনকি নতুন বৌকে নানা কথা শুনতে হয়। গরম চালের জিলাপি খেতে খুব সুস্বাধু। যাদের দাত আছে তারা মজা করে এ জিলাপি খেতে পারে । যাদের দাত নেই তারা ইচ্ছা করলেও এ জিলাপি খেতে পারেনা। অনেক সময় নাতী নাতনীরা বয়স্ক দাদা-দাদী, নানা-নানীকে লোভ দেখিয়ে জিলাপি খায়। তখন বয়সের ভারে দাঁত পড়ে যাওয়া দাদা-দাদী, নানা-নানীর জিভে লালা এসে য়ায়। এ সময় তারা জিলাপি খেতে না পারার ক্ষোভে নাতী নাতনীর উপরে ক্ষেপে য়ায়।
চট্টগ্রামের লোকজন যারা মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব-আমিরাত, সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, ওমান সহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে তারাও অনেক সময় শীত মৌসুমের সুস্বাধু চালের জিলাপি দেশ থেকে পাঠানোর জন্য পরিবারের লোক জনকে ফোন অথবা যাদের কাছে ইমেইল এ যোগাযোগ আছে তাদেরকে বলে দেয়। তখন তারা নিকট জনের কাছে জিলাপি পাঠানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে।