দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি: একটি নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমেই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত ভাষা সৈনিক অলি আহাদের স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ভাষা আন্দোলনের মহানায়ক অলি আহাদ শীর্ষক এ স্মরণসভার আয়োজন করে অলি আহাদ স্মৃতি সংসদ।এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, শাসনের মূলশক্তি জনগণের ভোট অথচ ১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনাভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। এ কারণেই আজকের এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই জনগণের অংশগ্রহণহীন দশম জাতীয় নির্বাচনের কথা ভুলে জনসম্পৃক্ততার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান সংসদের বিনাভোটে নির্বাচিতদেরই জনগণের ভোটে পাস করার আশায় আন্দোলন করার কথা ছিল। অথচ নির্বাচনের দাবিতে এখন আন্দোলন করছে বিএনপি।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যাপ্ত খাবার ছাড়া নিজ কার্যালয়ে বন্দী আছেন এটা কোন ধরনের মানবিকতা এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেউ অন্তরীণ থাকলেও তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া খাবার পাবেন না এটা ভাবা যায় না।
এসব কিছুর জন্য বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতিই দায়ি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, এই বিষাক্ত রাজনীতির কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও এখন প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধী দলকে দমন করা। তারা সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে। একসময়ের নিরাপত্তার প্রতীক র্যাবের কিছু সদস্যও এখন টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা করছে।
জাতীয়তাবোধ থেকেই বাংলাদেশের জন্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের উপর বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল কি এই বিষাক্ত রাজনীতির জন্য? দেশের এ অচলাবস্থা দূর করতে জনকল্যাণের রাজনীতিতে ফিরে আসতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অলি আহাদ সম্পর্কে এমাজউদ্দিন বলেন, তিনি ছিলেন মুক্ত মনের অধিকারী। যা মনে করতেন স্পষ্টভাবে তাই উচ্চারণ করতেন। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে আব্দুল মতিন, গাজীউল হক এবং অলি আহাদ এই তিন ভাষাসৈনিক সকলের কাছেই বিভিন্নভাবে সুপরিচিত এবং শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।তাদের অবদানের জন্যই আজ বাংলাভাষা বিশ্বের ইতিহাসে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করে ড. এমাজউদ্দিন।নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এখন সংলাপের উদ্যোগ না নিলে আজীবন হয়তো দাঁড়িয়েই থাকতে হবে।
সংকট নিরসনে সংলাপের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, এখন সংলাপ না হলে পরে হয়তো আর সম্ভব হবে না। বিষয়টি বুঝে থাকলে আলোচনায় বসুন। এখন বসা না হলে আজীবন হয়তো দাঁড়িয়েই থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মান্না বলেন, আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন, খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের রাণী দোহাই দিয়ে সংলাপে বসবেন না বলে পার পাবেন না। আপনি বলুন, ১৫ দিনের মধ্যে সংলাপে বসতে চান। এরমধ্যে বিএনপিও আন্দোলন বন্ধ করে নিতে পারে এবং সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। নইলে এক বছরেও সমস্যার সমাধান হবে না।
চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা স্বাভাবিক হতে সরকারের মন্ত্রীরা দুই দিন-চার দিনের কথা বললেও সংলাপ ছাড়া এক বছরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলেও মনে করেন মান্না।বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে আপনারা পেট্রলবোমার আগুনে মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। এটা বন্ধ না হলে এই ক্ষোভের আগুন মানুষের বুকেও জ্বলবে এবং আপনাদের প্রত্যাক্ষান করবে।বিএনপির কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ৪৭ দিন অবরোধ দিয়েও দাবি আদায় করতে পারলেন না, আর কতদিন লাগবে? মানুষ আপনাদের আন্দোলনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
নাগরিক ঐক্যের এই আহ্বায়ক বলেন,জনগণকে অন্ধ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিকদলগুলোর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে না আসলে কোনো দিনই আমাদের মুক্তি মিলবে না।অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, ব্যারিস্টার সরওয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্যারিস্টার পারভেজ প্রমুখ।