download

দৈনিকবার্তা-ফেনী, ২০ ফেব্রুয়ারি: ভাষা আন্দোলনের ৬৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে এবছর৷এখনো আক্ষেপ রয়ে গেছে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের পরিবারের সদস্যদের৷ ফেনীর দাগনভূঞায় বসবাসরত ভাষা শহীদ সালামের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবী হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থানে জাতীর এই বীর সন্তানের কবরটি চিহ্নিত করা৷ কিন্তু চয় দশকের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও দাবিটি পূরণ হয়নি৷ সালাম পরিবারের আর কয়েকটি দাবী হচ্ছে- সালামের স্মৃতি বিজড়িত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সালামের নামে নামকরণ, দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টকে সালাম চত্ত্বর নামকরণ, ঢাকা-ফেনী-দাগনভূঞায় একটি সড়ক সালামের নামে নামকরণ৷ একদিকে এ দাবী গুলো পূরণ হয়নি তেমনি স্থানীয়ভাবে শহীদ সালামের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলো তদারকির অভাবে চলছে ধূকে ধূকে৷ শহীদ সালাম পরিবারের সদস্যদেও দাবী, এ সমস্যাগুলো রাষ্ট্রীয় ভাবে সমাধান করা হোক৷

৬৩ বছরে চিহ্নিত হয়নি কবর: ১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া সালামের লাশ ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়৷ সরকারী উদ্যোগে শহীদ জব্বর, বরকত, শফিকের কবওে টাইলস্ ও শ্বেতপাথরের ফলক স্থাপন করে সেসব কবর সংরক্ষণ করা হয়৷ কিন্তু ছয় দশকে ও দাগনভূঞার সোনালী সন্তান শহীদ সালামের সমাধিস্থল সনাক্ত করে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷শহীদ সালামের ভাই আবদুল করিম বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী এলে ভাষা শহীদদের পরিবার-পরিজনের খোজ খবর নেয়া হয়৷ বাকি ১১ মাস তারা থাকেন উপেক্ষিত৷

dagon

নদীভাঙনে হুমকির মুখে ভাষাশহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর:ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি নদীভাঙনের কবলে পড়ে হুমকির মাঝে পড়েছে৷সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদী ভাঙন ঠেকাতে ও সালাম নগরের সড়কটি রক্ষায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিসি ব্লক ফেলার উদ্যোগ নেয়৷ ভয়াল নদী ভাঙ্গনে সালাম নগরের পাকা সড়কের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘর হুমকির মাঝে পড়ে৷ সমপ্রতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ভাঙ্গনস্থলে মাটি ভরাট করে কোন রকমে চলাচলের ব্যবস্থা করা হযেছে৷ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরজাহান বেগম জানান, নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে সালাম গ্রন্থাগার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়টি৷ তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত এব্যাপারে এগিয়ে আসার আহবান জানান৷এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, সালাম নগর কে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্লক নদীতে ফেলা হয়৷ নদীতে জোয়ার-ভাটা থাকায় ব্লক ফেলে কোনো কাজ হয়নি৷

নানা সমস্যায় সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর: ছাদ বেয়ে পানি ছুইয়ে পড়া, জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়েছে আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি৷ গ্রন্থাগারের ভেতর ভবনের বৈদু্যতিক সুইচ বোর্ড গুলি নষ্ট গেছে৷ ফেনী জেলা পরিষদ ও এলাকাবাসী জানায়, ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রামের নাম ‘সালাম নগর’ করা হয়৷ প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ সালামের বাড়ীর অদুরে নির্মান করা হয় ‘ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ‘৷ ২০০৮ সালের ২৬ মে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ৷

গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধনের পর প্রথমে দৈনিক ১২০ টাকা মুজুরীতে সম্পূর্ন অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন কেয়ার টেকার নিয়োগ দেয় জেলা পরিষদ৷ তার কাজ ছিল শুধুমাত্র জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা৷ অল্প বেতনের কারনে কিছুদিন পর সে চলে যায়৷ পরে একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেয়া হলেও সেও মাত্র কয়েক দিন পর চলে যায়৷ বর্তমানে লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করছেন সালামের ভাতিজি খাদিজা আক্তার৷ শেখ ফরিদ নামে একজন কেয়ারটেকার ও রয়েছে৷

বিদ্যালয়ের নাম এখনো লক্ষনপুর !ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ আবদুস সালামের নামে তাঁর গ্রামের নাম সরকারী গেজেটেই এখন ‘সালাম নগর’ করা হয়েছে৷ আগে ভাষা শহীদ সালামের গ্রামের ছিল লৰনপুর৷ কিন্তু গ্রামের নাম পরিবর্তনের পাঁচ বছর পরও একমাত্র বিদ্যালয়টির নাম এখনো ‘লৰনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসাবেই রয়ে গেছে৷ স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা উদাসিনতাকে দায়ী করছেন৷ কারো কারো মতে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য সরকারী বিধি অনুযায়ী টাকা লাগবে৷ কিন্তু পরিবারের সে সামর্থ নেই৷ অপরদিকে জেলা প্রশাসন বলছে, ভাষা শহীদের নামে গ্রামের নাম হয়েছে- প্রশাসনিক ভাবে লেখালেখির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের নামও গ্রামের নামে হবে৷ এজন্য টাকার দরকার হবেনা৷