দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি: টিম সাউদির বোলিং তান্ডবে বিশ্বকাপে ফের পরাজয় বরণ করল ইংল্যান্ড। শুক্রবার ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সাউদির ৭ উইকেটে ভর করে কিউইরা সফরকারীদের আটকে দেন মাত্র ১২৩ রানে। আর ওই মিশনে সাউদি একাই তুলে নেন ৭ উইকেট। ফলে ইংলিশদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের সহজ জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয়া ইংিলিশদের একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন সাউদি। অসাধারণ বোলিংয়ের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনি ৩৩ রানের বিপরীতে সংগ্রহ করেন ৭ উইকেট। যা নিউজিল্যান্ড দলের কোন বোলারের সেরা সাফল্য। আর বিশ্বকাপ আসরে এটি তৃতীয় সেরা পারফর্মেন্স। যার ফলে ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মাত্র ৩৩.২ ওভারে থেমে যায় ইংলিশ ব্যাটিং।জবাবে ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান অধিনায়ক ব্রেনডন ম্যাককারাম দেখিয়েছেন ভিন্ন ক্যারিসমা। যেখানে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাটই চালাতে পারেনি, সেখানে মাত্র ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওই কিউই ওপেনার। যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তার দ্রুততম ব্যাটিংয়ে ভর করে মাত্র ১২.২ ওভারে ১২৪ রানের জয়ের টার্গেট অতিক্রম করতে সক্ষম হয় কালোটুপিধারীরা।
এজন্য তাদের হারাতে হয়েছে মাত্র ২ উইকেট। ম্যাককালাম সংগ্রহ করেন ৭৭ রান।সকালে প্রথমে ব্যাটিং নেয়া ইংলিশরা শুরুতেই সাউদির তোপে পড়ে। পঞ্চম ওভারেই ইয়ান বেলকে বোল্ড করে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাউদি। পরের ওভারে ফিরে অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মইন আলিকেও বোল্ড করেন তিনি।
দুই অঙ্কে পৌঁছেই গ্যারি ব্যালেন্স ট্রেন্ট বোল্টের শিকারে পরিণত হলে অস্বস্তিতে পড়ে ইংল্যান্ড। অধিনায়কের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে পরি¯ি’তি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন জো রুট।মর্গানকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ ভাঙেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। এক সময়ে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১০৪ রান। এরপর মাত্র ১৯ রান যোগ করতে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জায় পড়ে তারা।
বিশ্বকাপে ইংলিশদের সর্বনিম্ন স্কোর ৯৩ রান। ১৯৭৫ সালের আসরে লিডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রান করেছিল তারা। এরপর ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওভালে ১০৩ রান করেছিল ইংল্যান্ড।দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন সাউদি। এই সময় চার ওভারে ১০ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি।ফিরেই জেমস টেইলরকে বোল্ড করেন সাউদি। পরের ওভারে জোড়া আঘাতে জস বাটলার ও ক্রিস ওকসকে বিদায় করেন তিনি। বাটলার উইকেটরক্ষক লুক রনচির গ্লাভসবন্দি হন। আর বোল্ড হয়ে যান ওকস।
পরের ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রড ও স্টিভেন ফিনকে ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৮ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখানোর পথে এগিয়ে যান সাউদি। কিš‘ জো রুটকে (৪৭) অ্যাডাম মিলনে আউট করলে সেই সুযোগ আর পাননি তিনি।৩৩ রানে ৭ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফলতম বোলার সাউদি। ওয়ানডেতে এটা তার সেরা বোলিং। তার আগের সেরা ছিল ৫/৩৩।টিম সাউদির বিধ্বংসী বোলিংয়ের পর শুরু হয় হয় অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং তান্ডব। দুই ইনিংসেই নিউজিল্যান্ডের আক্রমণের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। স্বাগতিকদের কাছে ৮ উইকেটের এই হারের কারণে পরের রাউন্ডে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে মর্গানের দলের জন্য।
বিশ্বকাপে ১৯৮৩ সালে শেষবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১২৩ রানের পুঁজি নিয়ে ৩২ বছর পর জেতার চেষ্টা করাটাও ভীষণ কঠিন ছিল তাদের জন্য। ইংল্যান্ডের তেমন কোনো দুরাশা থাকলেও ম্যাককালামের দাপুটে ব্যাটিংয়ে তা মিলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ১২ ওভার ২ বলে ২ উইকেট হারিয়ে এই বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ডকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন মার্টিন গাপটিল ও ম্যাককালাম। মাত্র ৪৩ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই ওপেনার।মাত্র ২৫ বলে ৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন ম্যাককালাম। অধিনায়কের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি ছক্কা ও ৮টি চারে। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপে দ্রুততম অর্ধশতকের নিজের রেকর্ডও ভাঙেন তিনি।১৮ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো ম্যাককালাম রেকর্ড গড়েছিলেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। সেন্ট লুসিয়ায় কানাডার বিপক্ষে ২০ বলে অর্ধশতকে পৌঁছেছিলেন তিনি।ম্যাককালামের পর গাপটিলকেও বোল্ড করেন ক্রিস ওকস। তবে রস টেইলরকে নিয়ে বাকি কাজ টুকু সহজেই সারেন কেন উইলিয়ামসন। ওকস ২ উইকেট নেন ৮ রানে।