দৈনিকবার্তা-ঝিনাইদহ, ১৯ ফেব্রুয়ারি: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় দশটি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে হাজার হাজার হেক্টর জমির উঠতি রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল হারিয়ে কৃষকরা ভেঙ্গে পড়েছেন। শুধু ফসল নয় প্রাণহানী ঘটেছে দেশীয় প্রজাতির ফিঙ্গে, দোয়েল, শালিক, টিয়ে সহ নাম না জানা হরেক রকম পাখিরও। এছাড়া হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নেও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপনে কাজ শুরু করেছেন। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি নবী নেওয়াজ সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে ৩৫’শ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানালেও ক্ষতির পরিমান দ্বিগুণ হবে। মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা জানান, বুধবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আটটি ইউনিয়ন সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর, নাটিমা, মান্দারবাড়িয়া, স্বরুপপুর, মহেশপুর পৌরসভা, বাশবাড়িয়া ও শ্যামকুড় ইউনিয়নে প্রাথমিক তদন্তে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশ বিনষ্ট হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে। তিনি বলেন, শিলাবৃষ্টিতে ২৫’শ হেক্টর জমির মশুড়ি, সাতশ হেক্টর জমির গম, তিনশ হেক্টর জমির ভুট্টা ও দুইশ হেক্টর জমির আম বাগানের আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া জাম, লিচু, লাউ ও কলাসহ বিভিন্ন তরিতরকারির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখনো বিভিন্ন গ্রামে শিলার স্তর দেখা যাচ্ছে। ধানের ক্ষেত মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
মহেশপুরের শ্যামকুড় মাঠপাড়া গ্রামের মিরন হোসেন জানান, ভোররাতে বৃষ্টির সময় বড় বড় আকারের শিলা পড়ে মাটিতে ৭/৮ ইঞ্চি উঁচু শিলাস্তর জমে যায়। সকাল পর্যন্ত এসব শিলা জমে ছিল। তিনি বলেন, শিলার সঙ্গে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছিল। এতে গম, মসুর, ভুট্টা, কলা, আম, তামাক ও পানের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক ইমাদুল জানান, ঝড়ে আমার ঘরের টিনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। সকালে মাঠে গিয়ে দেখি মসুড়ি ক্ষেত পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। ভালাইপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুল কাদের জানান, শিলাবৃষ্টিতে আমার ৩ বিঘা জমির তামাক ক্ষেত পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাকের পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। যাদবপুর ইউনিয়নের শফিকুল ইসলাম, ওসমান আলীর গম ভুটা, মসুড়ির ৯ বিঘা জমির ফসল সব নষ্ট হয়ে গেছে।মহেশপুর উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুলফিক্কার আলী জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। জীবনে এমন শিলা ঝড় দেখেননি বলে তিনি জানান। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা বেগম জানান, আমি নিজে নাটিমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। তিনি বলেন, গাছগুলো দাড়িয়ে আছে পাতাবিহীন। ফসলের ক্ষেত মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ মো. আকরামূল হক জানান।