14134440971212

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: হল-মার্ক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১২ সালে লোকসানের মুখে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো৷ তবে পরের বছর ব্যাংকগুলো আবারো মুনাফার ধারায় ফিরে আসে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে জনতা ছাড়া সরকারি খাতের অন্য ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা বেড়েছে৷ ব্যাংকগুলোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে৷চূড়ান্ত হিসাবে দেখা গেছে, কর ও সঞ্চিতি বাদে ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক ৪৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, জনতা ৩৯৩ কোটি ৮২ লাখ, অগ্রণী ৩৭৬ কোটি ৬৮ লাখ ও রূপালী ব্যাংক ৪২ কোটি ১৯ লাখ টাকা নিট মুনাফা করে৷ এছাড়া বিডিবিএল ১৪৩ কোটি ৭ লাখ ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করে৷ তবে বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৬৮৫ কোটি ৯৪ লাখ এবং কৃষি ব্যাংকের ১৮৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা লোকসান হয়৷

২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংক ১৮৯ কোটি ৯৮ লাখ, জনতা ৭৫৬ কোটি ৩১ লাখ, অগ্রণী ২৯২ কোটি ১ লাখ ও রূপালী ব্যাংক ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা মুনাফা করে৷ বিডিবিএল মুনাফা করে ১০০ কোটি ৭২ লাখ টাকা৷ তবে কৃষি ব্যাংকের ১৯৪ কোটি ১৫ লাখ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১৮ কোটি ২৯ লাখ ও বেসিকের ৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লোকসান হয়৷ সেই হিসাবে গত বছর অন্য ব্যাংকের নিট মুনাফা বাড়লেও কমেছে জনতা ব্যাংকের৷ পাশাপাশি লোকসানও বেড়েছে৷২০১৪ সালে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৪৪৮ কোটি ৩১ লাখ এবং ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩৪৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা মুনাফা করে৷ তবে আট ব্যাংকের সার্বিক হিসাবে লোকসান হয় দেড় হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৩ সালে আট ব্যাংকের মুনাফা হয় ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা৷

তবে ২০১৪ সালে সোনালী ও বেসিক ব্যাংককে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয় সরকার৷ এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক পায় ৭৯০ কোটি ও বাকি ৭১০ কোটি টাকা সোনালী ব্যাংক৷এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোর যে অর্থ লুট হয়েছে, সরকার তাদের সে অর্থ দিয়ে দিয়েছে৷ তাদের যে ঋণ অবলোপন ও প্রভিশনিং করতে হয়েছে, তা সরকারের অর্থ দিয়েই করেছে৷ এর পর যদি কোনো মুনাফা হয়, তা নিশ্চয়ই আসল মুনাফা নয়৷উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সরকার ব্যাংকগুলোকে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়৷ এছাড়া গত বছর সোনালী ও বেসিক ব্যাংককে দেড় হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়া হয়৷

জানা যায়,রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের উন্নতির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ২০০৭ সালে এগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়৷ এর পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছুটা ভালো ছিল ব্যাংক চারটি৷ তবে কাগজে-কলমে কোম্পানি করা হলেও সবকিছুই চলছে আগের ধারায়ই৷ তাই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ ফলে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি আর বড় কয়েকটি করপোরেট গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির পর ব্যাংক চারটির পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের শর্ত কখনই পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো৷ ২০১০ সালে ব্যাংক চারটি ভালো মুনাফা করলেও ২০১১ সালে মুনাফা কিছুটা কমে যায়৷ আর নানা কেলেঙ্কারির কারণে ২০১২ সালে বড় লোকসানে চলে যায় ব্যাংকগুলো৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালাঙ্ ি সোয়েটার, বেঙ্মিকো, রূপায়ণ হাউজিং, রেফকো ফার্মাসিউটিক্যালসহ কয়েকটি গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে অর্থায়ন করায় জনতা ব্যাংকের খেলাপি হার বেড়ে যাচ্ছে৷ ফলে কমে আসছে নিট মুনাফা৷