b7466fa3213c8c9e21cd76c303a5147a-kurigram

দৈনিকবার্তা-রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম), ১৮ ফেব্রুয়ারি: রিপন আহমেদ (২২) ওরফে গাডু বখাটের হাত থেকে রক্ষার জন্য ৯ম শ্রেণিতে পড়–য়া কন্যাকে বিয়ে দেন তার অসহায় বাবা’মা। কিন্তু তাতে রক্ষা পাচ্ছে না বখাটের কবল থেকে। বিয়ে দেওয়ার কারনে ওই বখাটে আরো ভঙ্কর হয়ে ওঠে। বিয়ের ৭দিনের মাথায় ওই বখাটে তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে আনতে যায় ওই নব বধুকে। এতে বাধা দিলে বখাটেরা মিলে নববধুর স্বামী হারেজ আলীকে (২৫) এলোপাথারি ভাবে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে বখাটের চেষ্টা সফল হয়নি। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার প্রত্যন্ত শান্তিরচর গ্রামের গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনা এটি।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন হারেজ আলী জানান, রাত প্রায় ১১টার দিকে ঘুম থেকে জেগে তোলে আমাকে। আমি দরজা খুলে বাইরে আসা মাত্রই তিনজনে আমাকে জাপটে ধরে এবং তাদের সঙ্গে থাকা আরো ৩/৪জন আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আমরা চিৎকার করলে তারা আমাকে এলোপাথারি ভাবে কোপাতে থাকে। মানুষজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এসময় তারা হুমকি দিয়ে কইছে, তোকে এই দুনিয়া থেকে পরপারে পাঠিয়ে দিব এবং তোর বউকে তুলে নিয়ে যাব। কথাটা মনে রাখিস। বখাটে রিপন তার বন্ধু আলম মিয়া (৩০) আর নুরু মিয়াকে (২৮) আমি চিনছি। তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।’

এদিকে ওই ঘটনার পর বখাটেরা মেয়েটির বাবা’মাকেও জীবন নাশের হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই উপজেলার টাপুরচর গ্রামের দিনমজুর বাসেক আলীর কন্যা রিনা খাতুন টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। বাসেক আলী অভিযোগ করেন, ওই বখাটের কারনেই কম বয়সে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের আগে ওই বখাটের অত্যাচারে মেয়েটি পালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করত। আর এ কারনে ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে রিনা খাতুনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে শান্তির চর গ্রামের আব্দুল মজিদ এর পুত্র হারেজ আলীর সঙ্গে। মূলত বখাটের কারনেই বাল্য বিয়ের নিয়ম না থাকলেও রিনা খাতুনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাসেক আলী বলেন, ‘এই যে দেহেন বিয়ার আগে ওই বখাটেক নিয়া কত শালিস দরবার করা হয়েছে। বখাটের নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রথমে ইউএনও, পরে থানা পুলিশে তারপর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিছি। কিন্তুক কেউই কিছু করেনি। থানাপুলিশও যেহানে কিছুই করা হায় না ওই বখাটের বিরুদ্ধে হেহানে আমরা আর কার কাছে যামু। এইজন্য বিয়া দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না আমার।’ নির্যাতিত পরিবারটির লিখিত অভিযোগ গুলো থেকে জানা যায়, গত বছর ৭ জুলাই তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর ২০ জুলাই তারিখে রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় কিন্তু পুলিশও নিরব ভূমিকা পালন করে। শেষে ৩ আগস্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর আবারও লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হয়। এতেও কোনো বিচার করা হয়নি। থানা পুলিশে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় বখাটে গাডু আরো ভঙ্কর হয়ে ওঠে। শেষে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ ছিল না।

বখাটেদের হাতে মারাত্মক ভাবে জঘম হওয়া রিনা খাতুনের স্বামী হারেজ আলীর আব্দুল মজিদ অভিযোগ করেন বলেন, ‘এহন তো আমার পোলারে বিয়া করাইয়া বিপদে পড়ছি। ওরা হুমকি দিয়ে তারা আমার পোলারে মাইরা ফেলব তারপর পোলার বউরে তুইলা নিয়া যাব। মাইনসে কয় ওই বখাটে গাডু সরকারি দলের লোকের সঙ্গে খুব খাতির। হুনছি ছাত্রলীগ করে ও। এহন আমরা কার কাছে বিচার পামু।’ এসময় ৯ম শ্রেণির ছাত্রী নববধু রিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ওই ছেলেকে পছন্দ করি না। ও জোর কইরাই আমাকে বিয়া করবার চায়। আমি রাজি হই না দেইখা স্কুলে যাতায়াতের আমাকে বহু অত্যাচার করছে। আমি পালিয়ে পালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলে সে রাস্তায় বসে থাকত। আর এখন তো আমার বিয়া হইছে। আমার স্বামী আছে। ওরা আমার স্বামীকেও মাইরা ফেলব বলে কইছে। তাগরে ভয়ে আইতে ঘুমাবার পারি না।’

ঘটনা বিষয়ে জানার জন্য টাপুরচর গ্রামের মাতাব্বর আফাজ সরকার, নুরুল ইসলাম, তারাচান কারী ও জালাল উদ্দিন জানান, বখাটে গাডুর বিরুদ্ধে আমরা গ্রামে একাধিবার শালিসী বৈঠক করেছি কিন্তু কোনো মতেই তার বখাটেপনা বন্ধ করতে পারিনি। শেষে আমরা পরিবারটিকে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশে পাঠিয়েছি। কিন্তু তারাও কেউ কিছুই করতে পারেনি বা করেনি। গেল জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-২.৮৩ পেয়ে টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয় রিনা খাতুন। এ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মীর আব্দুল হক জানান, ওই মেয়েটি আমার স্কুলের শিক্ষার্থী। ওর বাবা মা দু’জনেই একদিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি বলেছে আমাকে। কিন্তু আমি তাদের সাহায্য করতে পারেনি। কারন যে ছেলে গুলোর কথা বলেছে তারা টাপুরচর বাজারে বখাটেপনা করে এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। এমনিতে স্কুল থেকে আমার বাড়ি অনেক দূরে তাই কোনো ঝামেলায় যাইনি।

টাপুরচর গ্রামের বাসিন্দা অভিযুক্ত বখাটের পিতা নুরুল ইসলাম একজন মাদক ব্যবসায়ি বলে জানা গেছে। এলাকার মানুষ নুরুল ইসলামকে একজন চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ি হিসেবে জানে। তবে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ছেলেটা ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু মেয়ের পরিবারটি তাতে রাজি হয় না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে এবং তাকে বিয়ে করবে এটা কি অন্যায়?’ বখাটে রিপন আহমেদ ওরফে গাডু বর্তমানে পলাতক আছে। মতামত নেওয়ার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া গেছে। রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এর আগে অভিযোগ দিয়েছে কিনা-তা জানা নেই। তবে হারেজ আলীকে যে কুপিয়েছে তা আমি জানি। এ বিষয়ে থানা মামলা রেকর্ট করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি।’