দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: গুলশানের সোমবার শ্রমিক-কর্মচারী- পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের মিছিলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। সোমবার রাতে গুলশান থানায় বাদী হিসেবে মামলাটি করেছেন ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চু নামের এক ব্যক্তি।মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, শিমুল বিশ্বাস, সালাউদ্দিন আহম্মেদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মেজর হাফিজ, হুমায়ুন কবির খান, বাড্ডার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুল কাইয়ূম, সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন, ভাটারা থানা বিএনপির সহসভাপতি মানিক, সোহেল, চাঁদপুর বিএনপির মোস্তফা ও মামুন। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৬৫-৭০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর মামলার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলাটির বাদী ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তি ফোন ধরে জানান, ইসমাইল হোসেন শ্রমিক লীগের সঙ্গে জড়িত। মামলার এজাহারে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, সন্ত্রাস ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে।সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে রওনা হন সমন্বয় পরিষদের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গুলশান ২ নম্বর মোড়ের পাশে মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজার সামনে যাওয়ার পর একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। মিছিলে থাকা এক ব্যক্তির পায়ের ওপর এসে ককটেলটি পড়ে। এ ঘটনায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজায় ভাঙচুর চালান।
সোয়া ১২টার দিকে গুলশান-২ নম্বরে মিছিলটি আসা মুহূর্তেই একটি হাতবোমা ছুঁড়ে মারা হয়। এতে দুইজনের পায়ে বোমার স্প্লিন্টার ঢুকে আহত হন। এছাড়া আহত হন আরো বেশ কয়েকজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও গাড়ি ভাঙচুর করে। বোমা হামলায় ডান পায়ে আঘাত পেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধা প্র্রজন্মলীগের গেণ্ডারিয়া থানার সভাপতি রুবেল আহমেদ ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।তিনি জানান, মিছিলটি যখন খালেদার কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল তখন গুলশান-২ নম্বর মেট্রোপলিটন মার্কেটের সামেন কে বা কারা বোমা নিক্ষেপ করে। এসময় তিনি পায়ে আঘাত পান। পরে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। বোমা হামলায় আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ জোটের চলমান হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়কে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। শ্রমিক-কর্মচারী- পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাওয়ের মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান।গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডেকে খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়েই অবস্থান নিয়ে আছেন। অবরোধের মধ্যেই দফায় দফায় হরতাল করছে বিএনপি ও শরিকরা।এই কর্মসূচিতে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে; নাশকতা ও সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়ে গেছে।এর মধ্যে নাশকতার অন্তত তিনটি ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। এদিকে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ মে দিন পুনর্র্নিধারণ করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কোনো প্রতিবেদন না আসায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আরেফিন এ দিন পুননির্ধারণ করেন।গত বছরের ২১ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন।ওইদিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শাহবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।মামলার নালিশি অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিকেল ৫টায় খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে দুর্গাপূজার শুভ বিজয়া উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেখানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া শাহবাগ থানার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বক্তৃতাকালে বলেন, আওয়ামী লীগের বিশ্বাস ধর্মহীনতায়, ধর্মনিরপেক্ষতায় নয়। আওয়ামী লীগ সব ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত করে। আর লোক দেখানো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। এ জবরদখলকারী সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়।খালেদা জিয়ার এ কথায় বাদীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।