দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন,২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক অ¯ি’রতা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।তিনি রোববার সংসদে সরকারি দলের সদস্য দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে, অর্থাৎ ১২ শতাংশ বেশী।মন্ত্রী বলেন, বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২.১ ভাগ বেশি। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।দিদারুল আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫২ হাজার ৬৫৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা (৬ হাজার ৭৭২.৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) রেমিটেন্স এসেছে।তিনি বলেন, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ৭ হাজার ৫৬৮ দশমিক ১০ (১২.৫৭ ভাগ) কোটি টাকা কম।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের পাওনার পরিমাণ ১১ হাজার ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। রোববার তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য মোঃ মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, পাওনা অর্থের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৫টি ব্যাংকের পাওনা ১০ হাজার ৬৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ৫ হাজার ৫২০ কোটি ৪ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৬ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ৮৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও বেসিক ব্যাংকের পাওনা ২৯১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পাওনা ৩৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ১ হাজার ৪৮০ কোটি ৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন ১ হাজার ৮৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, বিডি সুগার এন্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ৩ হাজার ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, বিডি স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, বিডি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ২ হাজার ৩১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বিডি পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, ২ হাজার ৮২০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ১৩২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ১১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বিআরটিসি ৬১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিমান কর্পোরেশন ৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ে ১১ লাখ টাকা, বিটিটিবি ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, বিডি টি বোর্ড ৫৯ কোটি ১০ লাখা টাকা, বিডি ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, বিডি স্মল এন্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বিডি ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ৩৫ লাখ টাকা, পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন ৩ লাখ টাকা ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য প্রতি বছরের বার্ষিক বাজেটে মন্ত্রণালয়-ওয়ারী পরিকল্পনারে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।এদিকে, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩ লাখ।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য মনোয়ারা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, সীম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন একান্ত জরুরী। মোবাইল অপারেটরদের ‘সাবস্ক্রাইবার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম (এসআরএফ)-এর সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাবলী যাচাইকরণ এবং রিটেইলারের নিকট থেকে সঠিকভাবে নিবন্ধিত সংযোগসমূহের ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে মোবাইল সংযোগসমূহ চালু করা হবে।
সরকারি দলের সদস্য মো. আফতাব উদ্দিন সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩য় প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির সেবা চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সকল জেলা শহর এবং বিভাগীয় শহরে ৩জি সেবা বিস্তারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১ হাজারটি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১৮ দশমিক ০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪টি জেলায় ৯৮টি উপজেলার ১০০৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে, যা আগামী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সমাপ্ত হবে।মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৪৯৯ দশমিক ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ‘উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলার ২৯০টি উপজেলায় ৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাপান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ৬২২ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আধুনিক এনজিএন ভিত্তিক ২ লাখ ১০ হাজার টেলিফোন, ১ হাজার ৫শ’ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে, ইন্টিলিজেন্ট নেটওয়ার্ক ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে যা আগামী ২০১৫ সালের ৩০ জুনে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চর, নদী নালা বেষ্টিত, বিদ্যুৎবিহীন, দুর্গম এলাকায় ১০০৫টি ইউনিয়ন অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ‘দুর্গম এলাকার ১০০০টি ইউনিয়ন পরিষদে অপিটক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে যার মাধ্যমে ১০ হাজার ৫শ’ কিরোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও ট্রান্সশিমন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে।