ভারত-পাকিস্তান1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে শতভাগ সাফল্য অব্যাহত রাখলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। একাদশতম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ৭৬ রানে হারিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ফলে টানা ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করলো টিম ইন্ডিয়া। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ৩০০ রানের বড় স্কোর গড়ে ভারত। জবাবে ২২৪ রানেই অলআউট হয়ে হারের লজ্জা পায় পাকিস্তান।

একাদশতম বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচটি। সেটি আরও বড় আকার ধারণ করে বিশ্বকাপের শুরুতে ম্যাচটি হওয়ায়। সেই উত্তাপ ছড়িয়েছে পুরো বিশ্বেই। তাই ম্যাচ শুরুর ৪/৫ ঘন্টা আগ থেকেই মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন এ্যাডিলেডে বসবাসরত ভারত-পাকিস্তানের ভক্তরা।শুরুতেই ভারতীয় ভক্তদের মুখে হাসি ফোটান টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। কারণ টস কথা বলেছে ধোনির পক্ষে। আর টস জিতেই ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত টিম ইন্ডিয়ার দলপতির। ক্রিজে গিয়ে শুরুতে দেখেশুনে খেলার পরিকল্পনা দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের। উইকেটে সেট হবার পর হাত খুলে খেলাও শুরু করেন দু’জনে। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি রোহিত। ফিরেছেন ১৫ রানে।

রোহিতের বিদায়ে অষ্টম ওভারেই ক্রিজে যাবার সুযোগ হয় বিরাট কোহলির। ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা কোহলির দিকেই নজর ছিলো সবার। নজর ঠিকই কেড়েছেন তিনি। ধাওয়ানের সাথে দারুন এক জুটি গড়ার দিকে মনোযোগী হন কোহলি। তাতে সফলও হয়েছেন তারা। দলের স্কোরে রান জমা করতে গিয়ে দু’জনই তুলে নেন হাফ-সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া ধাওয়ান শেষপর্যন্ত আউট হন ৭৩ রানে। এজন্য পুরো দায়টা নিতে হবে কোহলিকেই। কারণ কোহলির ভুল ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে রান আউটের ফাঁেদ পড়েন ধাওয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সাথে ২২ দশমিক ২ বল মোকাবেলা করে ১২৯ রানের জুটি গড়েন ধাওয়ান। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি ভারতের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগেরটি করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার ও মোহাম্মদ কাইফ। ২০০৩ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিয়ানে ১০২ রান।

টেন্ডুলকার ও কাইফের ১০২ রানের জুটি শুধু কোহলি ও ধাওয়ানই টপকাননি। সেই রান এ ম্যাচেই টপকিয়েছেন তৃতীয় উইকেটে জুটি বাধা কোহলি ও সুরেশ রায়না। মাত্র ১৫ দশমকি ৩ বলে ১১০ রানের মারমুখী জুটি গড়ে ভারতকে বড় স্কোর গড়ার পথটা তৈরি করে দেন তারা।

এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি তুলে ফেলেন কোহলি। এই সেঞ্চুরি করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতীয় কোন ব্যাটসম্যানের এটিই প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিয়ানে টেন্ডুলকারের ৯৮ রান ছিল সর্বো”চ। ৭৬ রানে একবার জীবন পাওয়া কোহলি শেষ পর্যন্ত থামেন ১০৭ রানে। তার ১২৬ বলের ইনিংসে ৮টি বাউন্ডারির মার ছিলো।

কোহলির বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই প্যাভিলিয়নে যান রায়নাও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৪তম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া রায়না করেন ৭৪ রান। তার ৫৬ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কার মার ছিলো।কোহলি-রায়না জুটি যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে তিন শতাধিক রানের বেশি করা কষ্টসাধ্য ছিলো না ভারতের। কিন্তু ভারতীয় ইনিংসের শেষদিকে পাকিস্তানী পেসার সোহেল খানের দুর্দান্ত বোলিং-এ ৭ উইকেটে ৩০০ রানে গিয়ে থামে টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস। ৫৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছেন সোহেল। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সপ্তম বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালেন সোহেল। আর বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে নবম ও পাকিস্তানের প্রথম বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখান সোহেল।

জয়ের জন্য ৩০১ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইউনিস খানকে হারায় পাকিস্তান। ৬ রান করে ফিরেন ইউনিস। এরপর দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ও তিন নম্বরে নামা হারিস সোহেল। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রান যোগও করেন তারা। কিন্তু ১০২ রানের মধ্যে হারিস ৩৬ ও শেহজাদ ৪৭ রান করে আউট হন।

ঐ একই দলীয় রানে শোয়েব মাকসুদ ও উমর আকমল ফিরে গেলে ম্যাচ হারের পথ নিশ্চিত করে ফেলে পাকিস্তান। মাকসুদ ও উমর শুন্য রানে ফিরেন। শহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। কিন্তু আফ্রিদি ব্যক্তিগত ২২ রানে বিদায় নিলে দলকে জয় নয়, দলের হারের ব্যবধান কমানো দায়িত্বটাই পান মিসবাহ। শেষপর্যন্ত তাই করেছেন পাকিস্তান দলপতি। দলের হারের ব্যবধান কমিয়ে দলীয় ২২০ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন মিসবাহ। করেন ৭৬ রান। এরপর ৩ ওভার বাকী রেখে ২২৪ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ভারতের পক্ষে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার মোহাম্মদ সামি। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা। ম্যাচের সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।

বিশ্বকাপে এর আগে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তান। সবকটিতেই হারের স্বাদ পেয়েছিলো পাকিস্তান। এবারও জয়ের স্বাদ পেল ভারত। ফলে বিশ্বকাপ মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের লিডটা এগিয়ে গেল ৬-০ ব্যবধানে।
মেলবোর্নে আগামী ২২ ফেব্র“য়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত। আর ক্রাইস্টচার্চে ২১ ফেব্র“য়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে নামবে পাকিস্তান।