724px-চট্টগ্রাম_বিশ্ববিদ্যালয়ের_লোগো.svg

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) হলে উঠাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্র“প সিএফসি ও ভিএক্স এর মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ভিএক্স গ্র“পের শতাধিক নেতা-কর্মী ফাঁকা গুলি করে শাহজালাল হলে উঠতে চাইলে সিএফসির কর্মীরা বাধা দেন। একপর্যায়ে দু’পক্ষই অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সিএফসি কর্মীরা শাহ আমানত ও ভিএক্সের কর্মীরা শাহজালাল হলের মুখে অবস্থান করে গুলি ছুড়ছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স গ্র“পের অন্তত ৫১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় সেখান থেকে একটি রাম দা, ২টি চাপাতি, ১০টি রড ও ২ বস্তা পাথরের টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে।

হাটহজারী থানার ওসি (তদন্ত) সালাহউদ্দিন বাংলামেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অভিযান চালানো হয়েছে। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সিরাজদৌলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও শান্ত রাখার জন্য পুলিশকে অভিহিত করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারি প্রক্টর ও শিক্ষককে ধাওয়া দিয়েছে ছাত্রলীগ সমর্থিত শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন চ্যুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) এর কর্মীরা। রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে শিক্ষক ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও মূল ফটকেও তালা লাগিয়েছে তারা। এর আগে সকাল দশটার দিকে সিএফসি’র কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ক্লাবে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে প্রশাসনিক ভবন, মূল ফটক ও শিক্ষক ক্লাবের তালা খুলে দেয়।

এরআগে হলে উঠাকে কেন্দ্র করে বগি ভিত্তিক অপর সংগঠন সিএফসি গ্র“পের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভিএক্স গ্র“পের কর্মীরা। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ দিনভর থেমে থেমে চলে। এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়া, ভিসি প্রফেসর ড.আনোয়ারুল আজিম আরিফকে অবরুদ্ধ করে রাখা, এক সহকারি প্রক্টরকে বাসায় গিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ্রক্টর সিরাজ-উদ-দৌলাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে ছাত্রলীগের দেওয়া তালা খুলতে যান কয়েকজন সহকারী প্রক্টর। এসময় ছাত্রলীগের সিএফসি কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়।

তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন সহকারি প্রক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে তালা লাগানোর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এ সময় আলাউদ্দিন আলম ও মিনুর নেতৃত্বে সিএফসির কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে আমাদেরকে ধাওয়া দেয়। পরে আমরা কোন রকমে প্রাণে বেঁচে আসি।

তিনি বলেন, সকালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে সহকারি প্রক্টররা গেলে সিএফসির কর্মীরা তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে এমন আচরণ কারো কাছে কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। শিক্ষদের ধাওয়া দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আলম। তিনি বলেন, আমরা কোন শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। ’

এদিকে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভিএক্সের কর্মীরা শাহজালাল হলে এবং সিএফসি’র কর্মীরা শাহ আমানত হলে অবস্থান নিয়েছে।

হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। আমরা দুই হলের মাঝখানে অবস্থান করছি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ফটকে তালা দেয়ার পর এবার উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছে ছাত্রলীগ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন।

হলে ওঠাকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল থেকে সিএফসি ও ভিএক্স গ্র“পের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সিএফসি গ্র“প মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এর পরপরই উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দেয়া হয়।চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক সুমন মামুন বলেন, ছাত্রলীগ তাপস হত্যাকারীদের মদদ দেয়ার কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়েছে।

২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের সংঘর্ষে নিহত হন সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার। ওই দিন শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ভিএক্সের ২৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে ক্যাম্পাস ছাড়া ভিএক্স নেতাকর্মীরা।দু’মাস পর আজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গিয়ে ভিএক্স-সিএফসি’র মধ্যে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।