ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে দাপটে জয় অস্ট্রেলিয়ার

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি: ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচেই দর্শকে ঠাসা মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। উত্তেজনা ছড়িয়ে শুরুটা বেশ দাপটেই হলো অস্ট্রেলিয়ার। এ পুলের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে ১১১ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নতুন কীর্তি গড়েছেন অ্যারন ফিঞ্চ। এই প্রথম বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন অস্ট্রেলিয়ার কেউ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের পরাজয়ের দিনে একমাত্র আলোকিত মুখ স্টিভেন ফিন । অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে শেষ তিন বলে উইকেট নিয়ে গড়েছেন হ্যাটট্রিক। যা এক নতুন রেকর্ড ইংল্যান্ডের জন্য। প্রথম ইংলিশ পেসার হিসাবে বিশ্বকাপের মতো আসরে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ফিন। টসের প্রতিকূলে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে নয় উইকেটে ৩৪২ রানের বড় স্কোড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ৪১.৫ ওভারে মাত্র ২৩১ রান করেই।

লক্ষ্যটা বড়ই। শুরুটা ভালো হওয়া উচিত ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু হয়নি। দলীয় ২৫ রানেই ওপেনার মঈন আলীকে (১০) ফেরান স্টার্ক। দলীয় ৪৯ রানে ওয়ানডাউনে নামা ব্যালেন্সেকে (১০) বিদায় করেন মার্শ। উইকেটের সঙ্গে কিছুটা মানিয়ে নেয়া ওপেনার ইয়ান বেল শিকার হন মার্শের, দলীয় রান তখন ৬৬। ৪৫ বলে ৩৬ রান করে স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর দ্রুত বিদায় নেন জো রুট (৫) ও অধিনায়ক মরগান (০)। দুজনেই মার্শের শিকার। তবে মিডল অর্ডারে স্রোতের প্রতিকূলে একাই বুক চিতিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মোকাবেলা করেন জেমস টেইলর। বাকিরা আসা যাওযার মধ্যে থাকলেও তিনি ছিলেন অবিচল। দলীয় ৯২ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। ১২ রান করে বিদায় নেন বাটলার, মার্শের বলে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে। রীতিমতো কাঁপছে তখন ইংলিশ শিবির। তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে টেইলর-ওয়াকস কিছুটা আলোর পথ দেখান দলকে। এই জুটি থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৯২ রান। দলীয় ১৮৪ রানে ওয়াকস বিদায় নেন জনসনের বলে। তিনি করেন ৪২ বলে ৩৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। তারপর আবার ইংলিশদের হুড়মুড়িয়ে পড়া। ১৯৫ রানের মধ্যেই ইংল্যান্ডের নেই নয় উইকেট। শুন্য রানে ব্রডকে বোল্ড করেন স্টার্ক আর এক রান করা ফিনকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন জনসন। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ইংল্যান্ড।

তবে ইংলিশ সমর্থকদের অপেক্ষা ছিল টেইলরের সেঞ্চুরি নিয়ে। এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট চালানো টেইলর শেষ পর্যন্ত পারেননি শতক করতে। ক্রিজ ছেড়েছেন ৯৮ রানের (১১ চার, ২ ছক্কা) অপরাজিত ও লড়াকু এক ইনিংস খেলে। শেষ উইকেটে টেইলের সঙ্গী জেমস অ্যান্ডারসন রান আউট হয়ে যান ম্যাক্সওয়েলের থ্রোতে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নয় ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিশেল মার্শ। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জনসন ও স্টার্ক।

এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ৭.৩ ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ব্যক্তিগত ২২ রান করে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে বোল্ড আউট হন অসি ওপেনার। পরের বলে আউট হয়ে যান শেন ওয়াটসনও (০)। স্টিভ স্মিথের ব্যাটেও প্রতিরোধ দেখা যায়নি। মাত্র ৫ রান করে ক্রিস ওকসের শিকার হন নিউ সাউথ ওয়েলশের ব্যাটসম্যান।

তবে উইকেটের আরেক প্রান্তে ঠিকই প্রতিরোধ গড়ে গেছেন অ্যারন ফিঞ্চ। ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেঞ্চুরি তুলে নেয়। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করার পথে ১২৮ বল মোকাবেলায় ১৩৫ রান করে রান আউট হন তিনি (১২ চার, ৩ ছক্কা)। ফর্মের সঙ্গে যুথতে থাকা জর্জ বেইলি ৫৫ রান করে স্টিভ ফিনের শিকার হন। মিডল অর্ডারে ঝড়ো ৬৬ রান করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে হিমালয়ে ওঠান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাড ম্যাক্স ৬৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন। উইকেটের অন্য প্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন অভিজ্ঞ ব্রাড হাডিন। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ৩৩ রান করেন।

ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ফিন হ্যাটট্রিকসহ পাঁচটি উইকেট দখল করেন। ইনিংসের শেষ তিন বলে ব্রাড হাডিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিশেল জনসনকে আউট করেন তিনি। দুটি উইকেট পেয়েছেন স্টুয়ার্ড ব্রড। একটি উইকেট গেছে ক্রিস ওকসের দখলে। সেঞ্চুরিয়ান অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ জিতে নিয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।