saj-22

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি: পেট্রোল বোমা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে একটি কমিটি করতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷পেট্রল বোমা নিয়ে তিনি বলেন, আমি পেট্রোল বোমার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু এ বোমা কে মারে এটা খুঁজে বের করতে হবে৷ প্রধান বিচারপতি, আপনি একটি কমিটি করে দিন৷ এদের খোঁজ করার জন্য৷ কারা বোমা মারে৷ আর কীভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, এসব হত্যাকাণ্ডের আসল ব্যাপার কী? তা তদন্ত করতে হবে৷

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট- উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এসব কথা বলেন৷ দেশের চলমান অবস্থা ও সঙ্কট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই, এ অবস্থার সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই সংলাপে বসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷

তিনি বলেন, চলমান সঙ্কট রাজনৈকিত নয়, জাতীয় সঙ্কট৷ দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে চালাতে হলে একবার কেন বার বার সংলাপের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ডাকতে হবে৷ কারণ আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ সঙ্কট থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন৷ তিনি ( শেখ হাসিনা) অত্যন্ত বুদ্ধিমান৷ তিনি সবকিছু জানেন ও বোঝেন৷ কাজেই দেশের চলমান সঙ্কট কীভাবে উত্তরণ করতে হবে তা শেখ হাসিনার জানা আছে৷ তিনি ইচ্ছা না করলে তো সংলাপ হবে না৷ তবে দেশ, জাতি, দেশের কৃষক শ্রমিক ও সকল মানুষকে রক্ষা করতে হলে সংলাপের বিকল্প নেই৷ আপনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী, দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন তাই আপনাকেই এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলেছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনো নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন না কেন? তাই দেশের চলমান অবস্থার সমাধান করতে হলে আপনাকে সংলাপের ডাক দিতে হবে৷

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে তথাকথিত নির্বাচন আখ্যায়িত করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, কীভাবে ১৫৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন? পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নির্বাচন কোনোদিন দেখিনি৷ বাংলার মানুষ অনেক সচেতন৷ তারা ভোটের হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেবে৷

সংসদের বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিচিত্র বিরোধীদল, এরকম বিরোধী দল পৃথিবীর ইতিহাসে কোনোদিন দেখিনি৷ বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় কীভাবে সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন? তাদের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও (এরশাদ) আছেন৷ এটা কেমন বিরোধী দল?

৫ জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে খালেদা জিয়ার সাড়া না দেয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে বদরুদ্দোজা েেচৗধুরী বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে খালেদাকে আরেকবার টেলিফোন করতে তো প্রধানমন্ত্রীর বাধা নেই৷ দেশকে, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীকেই এগিয়ে আসতে হবে৷

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, জাতীয় সঙ্কটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন না, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই৷ উনি কোয়ালিফাইড৷ ইচ্ছা করলে পারেন, বুঝতে পারেন৷ সমাধান করতে পারেন৷ আর প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে তিন মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারেন৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনি সমস্যার সমাধান চান কি না৷সঙ্কট নিরসনের বিষয়ে বিকল্প ধারার সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি হচ্ছেন দেশ পরিচালনায় একমাত্র জ্যেষ্ঠ নেতা৷ আপনাকেই বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বসতে হবে৷ দিস ইজ অনলি সলিউশন৷ দেশকে রক্ষা করতে হবে৷

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বোমা কে মারে আপনাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ না কি অন্য কেউ তা খুঁজে বের করুন৷ পেট্রোলবোমাবাজ ধরে আদালতে নিয়ে আবার জামিন দেয়া হয়৷ এরা কারা?’ বোমাবাজদের শনাক্ত করতে প্রধান বিচারপতিকে একটি কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানান তিনি৷

পেট্রোলবোমা নিয়ে তিনি বলেন, আমি পেট্রোলবোমার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু এ বোমা কে মারে এটা খুঁজে বের করতে হবে৷ প্রধান বিচারপতি আপনি একটি কমিটি করে দেন এদের খোঁজ করার জন্য৷ বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে৷ এটার কারণও খুঁজে বের করতে হবে৷ এ হত্যাকাণ্ডের আসল ব্যাপার কী?

র্যাবের ডিজি বেনজিরের প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক ওই রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের জন্য নয়৷ এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন৷ তিনি এ ব্যাপারে আরো বলেন, বর্তমানে সাত লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷ কিছুদিন পর যদি ১৪ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে দেশে শতকরা একজন করে মামলার আসামি হবেন৷ তখন বিশ্বরেকর্ড হয়ে যাবে৷

তিনি বলেন, এখন সাত লাখ আসামি৷ কিছুদিন পরে যদি ১৪ লাখ আসামি হয়, তাহলে দেশে শতকরা একজন করে মামলার আসামী হবেন৷ তখন বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যাবে৷ পেশাজীবীদের এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এম খালেদ আহমেদ, পেশাজীবী সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ বক্তব্য দেন৷