সাগর-রুনি

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: সাগর সারোয়ার ও মেহরুন রুনির হত্যাকারীদের আগামী ১০ মার্চের মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ। বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা না হলে ১১ মার্চ ডিআরইউর সামনে অবস্থান করবে সাংবাদিকরা। আর ওই দিন নতুন করে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।সাগর-রুনির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘের সব দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী।প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন,আপনি মেঘের দায়িত্ব নেবেন বলেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দায়িত্ব নেননি। আপনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না করলে আমরা মনে করবো আপনিও আমাদের সঙ্গে তামাশা করেছেন।

শাহেদ চৌধুরী বলেন, সাগরের মা বলেছে- তাকে ভুলে যাও। ভাই বলেছে- বিচার আল্লাহর কাছে। সাগর-রুনীর বিচারের দাবি একটি গরম দাবি। যারা এ দাবির সঙ্গে তামাশা করেছে তারা আল্লার বিচার পেয়ে গেছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর পরবর্তীতে আর মন্ত্রিসভায় যেতে পারেননি। দেশের ইতিহাসে মাত্র একজন সাংবাদিক হত্যার বিচার ছাড়া আর কারো বিচার হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।

সমাবেশে বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুর আহসান বুলবুল বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন হলে বিচার হয় না। আমরা পেশাদারিত্ব সাংগাঠনিক দিকে থেকে সফল না। আমরা আমাদের পেশাকে রাজনৈতিক অন্দরমহলে ঢুকিয়ে ফেলেছি। হত্যাকাণ্ডে বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বলেন, আমরা একটা সঙ্কটে আছি। আমরা আসলে পারলাম না। অনশন হয়েছে, মিছিল হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে। ২৪, ৪৮, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম অতিক্রম হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। পুলিশ বার বার সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে সাগর-রুনীর হত্যাকারীদেরও বিচার হবে।

ডিইউজের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, আমাদের নখ ও দন্ত নেই। আমাদের সহকর্মীর বিচার হয়নি। এজন্য এক মিনিটের জন্য কলম বন্ধ রাখতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে হয় এটা চরম হতাশাজনক। সারগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচারে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক।

এদিকে আগামী ১০ মার্চের মধ্যে যদি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ১১ মার্চ প্রতিবাদ সভা করা হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, জাতীয় প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচি থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ।

সমাবেশে বাদশা বলেন, আজকে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে আমার বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করছি। এ জন্য আন্দোলনের সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে সাগর-রুনীর হত্যার বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। আজ তিনটি বছর অতিবাহিত হলেও খুনিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা খুনিদের দেখতে চাই।তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশার কারণে সাগরের মা তার সন্তান ও বউকে ভুলে যেতে বসেছেন।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তৎকালীন সময়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তবেই সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।শওকত মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত সাগর-রুনির খুনিদের প্রকৃত তথ্য যদি না পাওয়া যায়, তবে সাবেক মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাহলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। তৎকালীন মহাপুলিশ পরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তকাজে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর বলেছিলেন, আশা করি, অচিরেই রহস্য উন্মোচিত হবে।কিন্তু, এই সব দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কথার প্রতিফলন কেন আর হলো না, প্রশ্ন তোলেন এই সাংবাদিক নেতা। তিনি বলেন, এ কারণে তাদের (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তৎকালীন সময়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি) জিজ্ঞাসাবাদ করলেই খুনিদেও প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। কী কারণে তাদের কথা প্রতিফলন হয়নি, তাও জানা যাবে।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেন, অনেকদিন ধরেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলছে। কিন্তু, এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে নস্যাৎ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সবাই এই হত্যাকাণ্ডের পর অগ্রগতির কথা বলেছেন। কিন্তু, আজও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা হয়নি।সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তৃতীয় বার্ষিকীতে প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)-ডিইউজে।

বিএফইউজের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজ’র সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সাংবাদিক নেতা কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এই পর্যন্ত কয়েজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এর রহস্য এখনও অনুদ্ঘাটিত। গোয়েন্দা পুলিশের ব্যর্থতার পর এখন র‌্যাব এর তদন্ত করছে। রুনির ভাই মামলার বাদী নওশের আলম বলেন, কি বলব, কিছুই বলার নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো কথা-বার্তা হয় না।র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলছে। যেহেতু এটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড, তাই সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে।ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তা আদালতে জমা দেওয়া হবে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার বলেছেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ব্যর্থ নয়। তারা তদন্ত করে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী।