uu

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশে সদ্য নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডন সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করাকে বর্বরোচিত ও মর্মান্ত্রিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এ ধরনের কর্মকা- চালিয়ে সুফল বয়ে আনতে পারবে না।

ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন রাষ্ট্রদূত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাওস্থ কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেন।প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, ইইউ রাষ্ট্রদূত গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট ইইউ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, অগ্নিদগ্ধদের বেদনা ও দুর্ভোগ খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ঘটনায় আমরা খুবই দুঃখিত। তিনি বলেন, একজন মানুষ কি করে এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটাতে পারে ? এটি একটি বর্বরোচিত ও মর্মান্ত্রিক ঘটনা।প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার সকল দলকে নির্বাচনে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার সর্বদলীয় একটি সরকার অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছিল। এই সরকারে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। অথচ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বিএনপি ও নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, গত এক বছরে দেশে সকল সেক্টরে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে ও দারিদ্র্য বিমোচনে অর্থনীতির সকল সূচকে অগ্রগতি হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোন কারণ ছাড়াই আন্দোলনের নামে আকস্মিকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করে। তারা পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, যা কখনোই রাজনৈতিক কর্মকা- হতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো এখন সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার গর্ভবর্তী নারী ও শিশুকেও হতে হয়েছে।ইইউ’কে বাংলাদেশের বিশ্বস্থ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইইউ’র সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করতে ইইউ বিজনেস কাউন্সিল বাংলাদেশ নামে একটি নতুন ফোরাম গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ইইউ রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের ব্লু-ইকোনমিক ধারণার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এ ক্ষেত্রে ইইউ তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত রয়েছে। মাতৃত্ব, ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ইইউ স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ইতোমধ্যেই ৫ হাজার ২৭২টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। এতে পর্যায়ক্রমে দুর্নীতি বন্ধ, স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে।ইইউ’র রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ইইউ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।ইইউ রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তারা বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ উন্নয়নে সহায়তা দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশে নদীপথে পরিবহন খরচ খুবই কম। এতে আরো কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হতে পারে।প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রয়োজন।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।