shahidul_62256

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে তাদের দমনে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন বাহিনীটির প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। আইনের মধ্যে থেকে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন সন্ত্রাসীর প্রতি নমনীয়তা দেখানোর কোন সুযোগ আমাদের নেই।

বুধবার বেলা ১২টায় নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে মেট্রোপলিটন শ্যুটিং ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।তিনি বলেন, যারা পেট্রোলবোমা মেরে, আগুন দিয়ে নাশকতা করছে সেই সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখাবে। পুলিশের কাজ হলো অপরাধ দমন করা। যারা পেট্রোলবোমা মারছে, আগুন দিয়ে নাশকতা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের মধ্যে থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা না দেখাতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন তিনি।

বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক দাবি করেন তিনি বলেন, মহাসড়কে হাজার হাজার গাড়ি চলছে। আমি তো মনে করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ নেই বলে জানান তিনি।এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ৫ জানুয়ারি ২০ দল ও আওয়ামী লীগ দুইপক্ষই সমাবেশ ডেকেছিল বলে সহিংসতার আশঙ্কায় কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি।পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পরে তারাতো (বিএনপি) আর সমাবেশের অনুমতি চাই নাই।

আইজিপি হিসেবে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম এসে নাশকতা দমন ও নাশকতাকারীদের ধরতে জনগণের সহযোগিতা চান শহীদুল হক।তিনি বলেন, পুলিশের যে দায়িত্ব তা পালন করবে। জনগণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। পুলিশকে সহায়তা করতে হবে।

রাতে বাস চলাচল বন্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাত ৯টার পর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখতে মালিক সমিতিকে অনুরোধ করেছি।তারা আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন। তবে আমরা বাস চলাচল বন্ধ করিনি। মালিক সমিতি মনে করলে যে কোনো সময় আবার বাস চালু করতে পারবেন।

পুলিশের মহা পরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন,সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান থাকবে। যারা অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। এ ব্যাপারে যাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন দ্বিধা-সংকোচ না থাকে। পুলিশের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করা।সংবাদ সম্মেলনের আগে কল্যাণ সভায় আইজি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। অপরাধ দমন করা আমাদের কাজ। তাদের দমন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা কোন দলের হয়ে কাজ করছি না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন,পুলিশ একটা কোয়াসি জুডিশিয়াল(আধা বিচারিক) সার্ভিস। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিচারকের দায়িত্ব পালন করে। তার তদন্তে যাতে প্রভাবিত না হয় সেটি দেখা হয়।

নিরপেক্ষভাবে যাতে সে তদন্ত করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হয়। স্বতন্ত্র মামলায় কারা আসামী হবে, কাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিবে এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার একান্ত বিষয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কারো বিরুদ্ধে যদি যথেষ্ট সাক্ষী প্রমাণ পায়, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিতে পারে। এটা তদন্ত কর্মকর্তার নিজের এখতিয়ার। যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হবে সে জন্য সে যদি অন্য কোন সংস্থার বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তা চায় তাহলে তাকে সে সহায়তা দেওয়া হবে। যদি কেউ মামলার আসামী হয়, তার বিরুদ্ধে যদি সাক্ষ্য প্রমান থাকে সেটার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা তদন্তকারী কর্মকর্তার ব্যাপার।’

নাশকতা দমনে জনগণের সহায়তা চান পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন,আমি সবসময় জনগণের সহায়তা চাই। জনগণকে আমাদের পাশে রাখতে চাই। পেট্রোলবোমায় মানুষ মারা কোন সাধারণ নাগরিক মেনে নেবে না। তারা এটা সমর্থন করে না। যেহেতু এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জনগণ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পুলিশকে সহায়তা করবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জনগণের সহায়তা চাচ্ছি। যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারি।

বিরোধী জোটকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগপ্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন,স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকার বন্ধ করেনি। সরকারতো জরুরি অবস্থা দেয়নি, যাতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। এধরণের কোন আদেশ বা প্রজ্ঞাপনতো নেই। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কবে বন্ধ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে একেএম শহীদুল হক বলেন,যারা নাশকতার কর্মসূচি দেয় তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। এগুলো কবে বন্ধ করবে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীতাকুণ্ড এলাকায় কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি। তিনি বলেন,‘পুলিশের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডে বিজিবি ক্যাম্প আছে। র‌্যাবের টহলও আছে। দরকার হলে সেখানে আরো ফোর্স বাড়ানো হবে। ওই এলাকায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কমিটি করা হবে। যারা দুষ্কৃতিকারী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ভারপ্রাপ্ত কমিশনার এ কে এম শহীদুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেফতাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিএমপির পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাহিনীটির মহাপরিদর্শক।