দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: অবরোধ-হরতালে প্রায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিএনপি— জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।এদিকে, বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সামনে মঙ্গলবার বিএনপির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।মঙ্গলবার ভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে পাঠানো সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দেয়া সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের দিনই টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে ইমেইলে পাঠানো সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মঈন খান বলেন,চলমান অচলাবস্থা নিরসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ আয়োজনে জাতিসংঘের যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন তারা। সংলাপে বসার মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাসহ প্রায় ১০ হাজার কর্মী মিথ্যা মামলায় আটক রয়েছেন। বিএনপির এ নেতা মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং চীনের মধ্যে সেতুবন্ধন হওয়ায় এখানের কোনো সমস্যায় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মতো এ অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ রয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান অচলাবস্থার দ্রুত সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও স্বার্থসংশ্লিষ্ট মন্তব্য করে মঈন খান আরো বলেন, একমাত্র আলোচনায়ই সঙ্কটের সমাধান আনতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে কোনো সঙ্কট উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে আলোচনা উল্লেখ করে আলোচনা ব্যর্থ হলে পরবর্তী পদক্ষেপও হবে আলোচনাই বলেও জানান তিনি। সহিংস আন্দোলনের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির এই প্রবীন নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক আচরণ ও মূল্যবোধের অভাবে দীর্ঘ সময় ধরে সৃষ্ট রাজনৈতিক দ্বন্দ্বেরই ফল হচ্ছে এই সহিংসতা।
চলমান সহিংসতা রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মন্তব্য করে এর সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করেন মঈন খান। নাশকতার জন্য উল্টো সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেন, আশ্চর্যের বিস্ময়, সরকার এখনো একজন চিহ্নিত অপরাধীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীরা শাসক দলের সহায়তা পাচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়ার পর প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। নাশকতার এসব ঘটনায় এরইমধ্যে আগুনে পুড়ে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত তিনটি পৃথক চিঠি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বরাবর পাঠানো হয়।
নাগরিক সমাজের এ প্রস্তাব নিয়ে সরকার কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাঁদের ওই প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। সন্ত্রাস, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক দলকে তাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা (নাগরিক সমাজ)।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা মাকে সন্তানহারা করছে, সন্তানকে মা-হারা করছে, পেট্রলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে পোড়াচ্ছে, তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। শামসুল হুদা কেন? যে কেউই বলুক না কেন? তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যদি সংলাপ হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সংলাপ করত।
দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানের কারণে চলমান সঙ্কট অবসানের লক্ষ্যে ওই চিঠিতে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানানো হয়।এর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, এইসব ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গি তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং যে দলটি নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদেরকে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং এটি গ্রহণযোগ্য নয়।শামসুল হুদা কেন, আর যে কেউ এ উদ্যোগ গ্রহণ করুক তা বাস্তব সম্মত নয়। আপনারা লক্ষ্য করেন, যিনি খালেদা জিয়াকে যে কথা বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে একই কথা বলেছেন, তার মানে সন্ত্রাসীদের সাথে কি আমরা এককাতারে দাঁড়ানো?
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পর চলমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা। সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দুটি পৌঁছে দেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা। এর আগে তার স্বাক্ষরিত চিঠি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রিন্স চঞ্চল মাহমুদ।
চিঠির বিষয়ে নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম সংগঠক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, এ টি এম শামসুল হুদা শনিবার নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়ার গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বর্তমান সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।তিনি বর্তমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এর অংশ হিসেবে আজকে তিনি চলমান সঙ্কট নিরসনে সবাইকে চিঠি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোস্তফা আবিদ খান উপস্থিত ছিলেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৫ ও ৬ ফেব্র“য়ারি ডব্লিউটিও কার্যালয়ে সেবা খাতে বাণিজ্যবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।