11-02-15-PM_DMCH Burn Unit-21

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,কার সঙ্গে আলোচনা? হত্যাকারীদের সঙ্গে? আগুনে পুড়ে মানুষ মারে তাদের সঙ্গে— খুনির সঙ্গে কি কথা? যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই, খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়।

বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ২০ দলের ডাকা অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের দেখতে সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে যান প্রধানমন্ত্রী। এসময় আহত প্রত্যেকের হাতে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন তিনি।

রাজনীতির নামে মানুষ খুন করছেন খালেদা জিয়া এ কথা উল্লেখ করে পরে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সংলাপের কথা তুলছেন, তাদেরকে প্রথমে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বিএনপি নেত্রীকে বলতে হবে।তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যেভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে তা কোনো রাজনীতি হতে পারে না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।বিএনপি নেত্রীকে মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স কেউ দেয়নি দুই বছরের শিশুর ওপরও বোমা হামলা হয়েছে। দগ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। আর তিনি গুলশানে আরাম আয়েছে থেকে মানুষ পোড়ানোর হুকুম দিয়ে যাচ্ছেন। এটা সরকার কোনোভাবেই মেনে নেবে না। জঙ্গিবাদের শাস্তি যেভাবে হয়েছে আগে ওেসভাবেই তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ রাজনীতিকে দোষারোপ করছেন কিন্তু এটা তো রাজনীতি না। এটা একেবারেই জঙ্গিবাদ। খালেদা জিয়াকে বলবো এ মুহূর্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স তাকে কেউ দেয়নি। জামাত শিবিরকে নিয়ে তিনি আমার দেশের মানুষকে এভাবে হত্যা করবে এটা আমরা কখনোই সহ্য করতে পারবো না।সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, যারা মানুষ হত্যার রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। আন্তর্জাতিকপর্যায়ে যেমন জঙ্গিদের বিচার হয় তেমনভাবেই এ দেশের জঙ্গিদের বিচার হবে। দয়া করে সংবাদমাধ্যম একটা করেন এই জামাত-শিবির জঙ্গিদের খবর প্রকাশ করবেন না।

গত ৬ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২৫ জন। এর মধ্যে এখন ভর্তি আছেন ৫৩ জন, চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন ৬৩ জন। আর মারা গেছেন ৯ জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈরাজ্য সৃষ্টি ও পেট্রোল বোমা হামলার প্ররোচণাকারীদের সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের হোতাদের বিচার হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্মম সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বোমাবাজ এবং এর নির্দেশদাতা, অর্থের যোগানদার ও পরিকল্পনাকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা যেকোন মূল্যে সন্ত্রাসবাদ দমন করবো। এ জন্য যতদূর যেতে হয় আমরা যাব।এ বর্বর হত্যাকান্ড ও জ্বালাও- পোড়াওকে রাজনীতি হিসেবে অভিহিতকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা রাজনীতি নয়। যারা এটাকে রাজনীতি বলছেন তারা ভুল কথা বলছেন। এ হ”েছ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। এই নির্মম অপরাধীদের নির্মূল করতে যা প্রয়োজন আমরা তা করবো।

সুশীল সমাজের একাংশের বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংলাপ কার সঙ্গে? খুনীদের সঙ্গে ? সরকার কেন খুনীদের সঙ্গে বসবে?তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীকে তাঁর খুনের মিশন বন্ধ করতে হবে। তাকে কেউ মানুষ মারার লাইসেন্স দেয়নি। যদি তাদের সংলাপে বসার সে ধরনের কোন আগ্রহ থাকে, তবে আগে হত্যা ও জ্বালাও- পোড়াও বন্ধ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি খালেদা জিয়ার কোন দয়া-মায়া নেই। তা না হলে তিনি এভাবে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারতেন না। এ হচ্ছে বিকৃত মানসিকতা।শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হরতাল বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হরতাল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও এসএসসি পরীক্ষায় মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি করছে।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয় থেকে এসব নৈরাজ্যের প্ররোচনা দিচ্ছেন। ওই কার্যালয়ে তিনি বিলাসী জীবন-যাপন করছেন।

শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের অপশক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের সংবাদ পরিবেশন না করতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রচার পরিবেশনা তাদের আরো ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাতে প্ররোচিত করছে।তিনি ৬৩ জন অগ্নিদগ্ধের হাতে পরিবার সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।

তিনি প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে মোট ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করেন। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন ও চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। তিনি পেট্রোল বোমা হামলায় আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকার তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ডা. সামন্তা লাল সেন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।