দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একজন খুনি, একজন জঙ্গি নেতা। তিনি হুকুম দিয়ে তার পেটুয়াবাহিনীর মাধ্যমে ককটেল ফুটিয়ে, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ খুন করছেন। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়- তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বুধবার জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ও জামায়াত কোনো রাজনীতি করছে না। তারা আন্দোলনের নামে নাশকতা চালাচ্ছে। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ খুন করছে। ২০ দলীয় জোট যখন দেশের মানুষকে ভীত সন্ত্রস্থ করে রাখছে সেখানে খালেদা জিয়ার বাসভবনকে সুরক্ষিত করতে তার কাঁটার বেড়া দেয়া হচ্ছে। মানুষ মেরে জনরোষ থেকে তিনি বাঁচতেই এ বেড়া দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান মন্ত্রী।তিনি বলেন, আইন করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে নিষিদ্ধ করার দরকার হবে না। জনগণ না চাইলেই এমনিতে বিএনপি-জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
আব্দুল মতিন খসরুর অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির এই জোটের সহিংসতায় খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদি তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাভাই খালেদার সৃষ্টি। উনি বাংলা ভাইয়ের মা। বিএনপি একটি জঙ্গিবাদী দল, তাই তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তিনি গণতন্ত্র, ভোট মানেন না। তিনি লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেত চান।স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টক-শোতে যারা এ নাশকতার উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে আমরা মনিটরিং করছি। যদি তারা সত্যি উস্কানি দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যারা কখনো নির্বাচনে জিততে পারেনি, দল গড়তে পারেনি, তারাই ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। তাদের ক্ষমতায় যাবার খায়েস আছে। এদের অনেকেই গভীর রাতে টক-শোতে গিয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের এই সহিংসতাকে উস্কানি দিয়ে কথাবার্তা বলছে। অথচ তাদের একজনও বার্ন ইউনিটে যাননি, কোনো সাহায্য সহানুভূতি তো দূরের কথা। কই তারা তো এই ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা নিয়ে কোনো কথা বলছেন না?
শেখ হাসিনা বলেন, ৩৭ দিন যাবৎ তারা দেশকে অশান্ত করে রেখেছে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ খুন করে চলেছে। দেশের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যহত করছে। কৃষক তার ফসল বিক্রি করতে পারছে না। ২০১৩ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করতে গিয়ে নাশকতা চালিয়ে শত শত মানুষ খুন করেছে। এরপরও আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষ সুখি ছিল। কিন্তু দেশের উন্নয়ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে খালেদা জিয়ার। জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই তিনি দেশ ধ্বংসের কাজে নেমে পড়েছেন। তিনি মানুষ খুন করে লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। এই খুনি জঙ্গিদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল হোসেন, মান্না সাহেবসহ যারা এতো কথা বলে যাচ্ছেন তাদের ক’জন বার্ণ ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ মানুষগুলো যারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তাদের দেখতে গেছেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন বা সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন? উনারা বসে আছেন খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করবেন, লাশ ফেলবেন, আর উনারা লাশের পথ বেয়ে ক্ষমতা দখল করবেন। এ ধরনের চিন্তা নিয়েই উনারা আছেন। কিন্তু উনাদের সে আশা বা আকাক্সক্ষা কখনও পূরণ হবে না। তাদের এ আশা নিরাশায় পরিণত হবে। কারণ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এসেছে, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকবে আর যারা জনগণের জান-মাল নিয়ে খেলবে তাদের কেন জনগণ ক্ষমতায় বসাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যারা ফল পায় তারাই ফল খায়। এটাই হয়ে আসছে। লাশ ফেলবেন খালেদা জিয়া আর সেই লাশের ওপর দিয়ে সবাই ক্ষমতায় চলে যাবেন। এ ধরনের ক্ষমতা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এ হত্যাকন্ড কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা পৃথিবীতে আর কেউ দেখেনি। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন সব সময় হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষার ঠিক একদিন আগে ড. কামাল হোসেন ও মান্না গং যখন খালেদা জিয়াকে শোক জানাতে গেলেন। আমরা ভেবেছিলাম তারা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়াকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাবে। বিএনপি নেত্রী অন্তত ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার কথা ভাববেন। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম উনাদের মুখ থেকে একটি বারের জন্যও হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের কথা আসেনি। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য এদেশের উনারা রাজনীতিও করেন আবার সুশীলও হয়ে যান। প্রাইভেট চ্যানেলগুলোতে যেগুলো বর্তমান সরকারের সময়ে করা সেখানে বসে তারা অন্তত বেগম খালেদা জিয়াকে বলবেন যে আগুনে পুড়িয়ে আর কোন মানুষকে তিনি যেন হত্যা না করেন এবং খুন-খারাবি না করেন। কিন্তু তাদের একটিই কথা আর কয়েকটা দিন যাক একটা ঘটনা ঘটবে। কি ঘটনা ঘটবে? কেউ এসে উনাকে কি ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন, এ আশায় উনি একটির পর একটি লাশ ফেলে যাচ্ছেন। নিজের ক্ষমতার লোভে এভাবে লাশ ফেলবেন, এটা কোন ধরনের রাজনীতি।শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনার উস্কানি দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে মনিটরিং করা হচ্ছে অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। সরকারের কোন দোষ থাকলে অবশ্যই তার সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু এ ধরনের মানুষ পোড়ার ঘটনায় সমর্থন ও উস্কানি দেবেন, তা হতে পারে না। তাহলে তারা এ মানুষ খুনের জন্য অপরাধী হবেন।
সংসদ সদস্য আবদুর রউফের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনের কোনো অভাব নেই। বিশেষ সন্ত্রাস দমন আইন, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট আছে। তাই নতুন কোনো আইনের দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করার দরকার হবে না, তবে স্পেশাল কোর্টে এসব নাশকতাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করছে সরকার। এসময় তিনি নাশকতার বিচারের কাজে নিয়োজিত বিচারকদের প্রতি নাশকতার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। মৌলভীবাজারের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ প্রশ্ন করেন- এ সহিংসতার বিচারের জন্য আইনের ধারার কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন সংশোধন করার কোনো প্রয়োজন এক্ষুণি দেখি না। কেননা আমাদের বিদ্যমান আইনে এ সহিংসতার বিচার করা যাবে। তবে দ্রুত বিচারের জন্য আইনমন্ত্রীকে বলেছি, তিনি এ বিষয়টি দেখছেন। সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, বার্ন ইউনিটে আমি গিয়েছিলাম। দগ্ধ রোগীদের ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছি। ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর যারা ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরও এককালীন অনুদান দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, তবে আমাদের বার্ন ইউনিটে কিছু যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। সেখানে শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসার কাজে একটি যন্ত্র কেনার জন্য সরকার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আর বিশেষ রোলিং বেডের জন্য ৩ কোটি, মোট ৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দ্রুত কেনা হচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, সিএমএইচ, কুর্মিটোলাসহ দেশের বিভাগীয় জেলা হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট খোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বেশকয়েকটি জেলা শহরের হাসপাতালে পুড়ে যাওয়া রুগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ সেল খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের লাশ ফেলে এবং মানুষকে পুড়িয়ে এক ধরনের লোক সেখান থেকে ফায়দা লুটে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দেশের রফতানি খাতের আয় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য শরীফ আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতে আয় দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে আমদানি ব্যয় ছিল ১৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সরকার দেশের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম সহজীকরণ, আমদানি-রফতানি নীতি পৃথকভাবে প্রণয়নের মাধ্যমে এ পথে পূর্বেকার বাধাসহ জটিলতা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশে কমার্শিয়াল উইং সহ সকল বৈদেশিক মিশনকে রফতানি প্রসারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কতিপয় রফতানি পণ্যে নগদ সহায়তা প্রদান, রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, রফতানি বাজার বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং শুল্ক ও অশুল্ক, নন-ট্যারিফ বাধা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া নিয়মিত বিদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও একক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, প্রতিবছর সিআইপি সনদ ও রফতানি ট্রফি প্রদান, রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ।তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন দেশের শুল্কসহ নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা-বিপত্তি দূরীকরণের লক্ষ্যে সার্কভুক্ত দেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনাসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সাউথ আফ্রিকা থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ কর্তৃক প্রদত্ত জিএসপি সুবিধার রুলস অব অরিজিন সহজীকরণের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক মিশন প্রেরণ করা হচ্ছে। এ সকল মিশনসমূহ রফতানি বাধা দূরীকরণে সহায়ক হয়েছে। এর ফলে বাজার বহুমুখীকরণ সম্ভব হবে।