হরতাল

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: অচিরেই দিনের বেলাতেও সকল সরকারি অফিস বন্ধ করে দিতে সরকার বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করে বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা হরতালের সময় বাড়িয়েছে ২০ দলীয় জোট। আগের ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ছয়টায় চলমান হরতাল শেষ হওয়ার কথা ছিল।

দেশব্যাপী চলমান হরতাল আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়িয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। পূর্ব ঘোষিত হরতাল বুধবার সকাল ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এবার তা শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে।মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হরতালের সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণার ফলে টানা দু’সপ্তাহ জুড়ে সব কর্মদিবসই হরতালের কবলে পড়লো।

গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সকাল ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা হরতালের সঙ্গে আরো ৩৬ ঘণ্টা জুড়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল চালিয়েছিলো ২০ দলীয় জোট। এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সকাল ৬টা থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকে তারা। মঙ্গলবার তার সঙ্গে আরো ৪৮ ঘণ্টার হরতাল জুড়ে দেওয়া হলো। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ সরকার গণদাবি মেনে না নেয়ায় আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি পুনরায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হলো।

তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণে আওয়ামী উগ্র বাসনাই চলমান রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ। অসৎ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই তারা জনপ্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিকে বেআইনিভাবে বিরোধী দল দমনের নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে। রাত ৯টার পর মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে সরকারের অস্তিত্বহীনতাকেই স্বীকার করে নেয়া হলো দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, অচিরেই সরকার দিনের বেলাতেও সকল সরকারি অফিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনের গতি দেখে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা এখন তাদের পতনের প্রহর গুণছে। অজস্র নির্যাতনের শৃঙ্খল ভেঙ্গেই এই আন্দোলন এখন চুড়ান্ত পরিণতির দিকে অগ্রসরমান। এই আন্দোলন গণতন্ত্র মুক্তি ও গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। মানুষের নিশ্চিন্তে ভোট দেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। একটি অমানবিক, নিষ্ঠুর, হিংসাশ্রয়ী, গণতন্ত্র বিনাশী এবং অন্ধ ও অহংকারী সরকারকে ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য করার আন্দোলন। গণদাবির বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন থেকে পিছপা হবেনা ২০ দলীয় জোট। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যেতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এবং এখন পর্যন্ত অবৈধ সরকার গণদাবি মেনে না নেয়ায় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দেওয়া হল। চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি পূণরায় বুধবার সকাল ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হলো।

তিনি অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে দলীয়করণ, কুক্ষিগত বিচার ব্যবস্থা ও দলীয় মনোভাবাপন্ন বিচারকদের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ওপর বিচারিক নির্যাতনের মহড়া চালানো হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী চলমান রাজনৈতিক সংকটকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নামে অভিহিত করেছেন। মূলত: পঞ্চদশ সংশোধনীর পক্ষে শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্ত ও ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণে তার উগ্র বাসনাই কথিত মানবসৃষ্ট দুর্যোগের উৎপত্তির কারণ এবং সেজন্য তিনি ও তার দল দায়ী বলে সালাহ উদ্দিন দবি করেন।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের গণদাবিতে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন চলছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী সরকার নিজেরাই সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর অপকৌশল অবলম্বন করছে।

এসময় কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বাত্ত আহ্বান জানান তিনি।গণদাবির বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছপা হবেনা ২০ দলীয় জোট বলে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।