দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: শেষ দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমে উঠেছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। ভিড়ে বেড়েছে বিক্রিও। মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলার মেয়াদ এক মাস হলেও হরতাল-অবরোধের কারণে ১০দিন সময় বাড়ানো হয়। মেলার শেষ দিন মঙ্গলবার (ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শেষ দিনে বিভিন্ন অফার আর ছাড়ের কারণে খুশি ক্রেতারা।
এদিকে, ২০তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে ৯৫ কোটি ০৬ লাখ টাকার। গতবছর রপ্তানি আদেশ ছিলো ৮০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।গতবছরের চেয়ে এবছর রপ্তানি আদেশ বেড়েছে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।১ জানুয়ারি মাসব্যাপী ২০তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়। হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে মেলা বাড়ানো হয় ১০ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ছুটির দিন (শুক্র ও শনিবার) ছাড়া মেলায় বিকিকিনি তেমন ভালো হতো না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে মেলার সময় বৃদ্ধি করেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ৩০ দিনের মেলা ৪১ দিনে গড়ালেও বিক্রিতে খুশি নন বিক্রেতারা।তবে শেষ দিন ভালো বিক্রি করে কিছুটা হলেও লোকসান ঠেকানো যাবে বলে আশা করছে বিক্রেতারা।
মূল্যছাড় আর বিশেষ অফারে শেষ দিন পণ্য কেনা যাবে বিধায় সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। মূল্য ছাড়ের সুযোগে শেষ দিনে পোশাক, প্লাস্টিক, ক্রোকারিজ, খাদ্যপণ্য, কুটিরশিল্প, প্রসাধনী, অলঙ্কার ও শিশুদের খেলনা সামগ্রীর স্টলে ছিল উপচেপড়া ভিড়।এক হাজার টাকায় ব্লেজার কিনে খুশি কারওয়ান বাজার থেকে আসা জসিম উদ্দিন। জসিম বলেন, সোমবার ১ হাজার ২শ টাকা হলেও আজ ১০০০ টাকা।
শাহী ব্লেজার স্টলের সেলসম্যান শরিফুল ইসলাম জানান, যে টার্গেট নিয়ে মেলায় আসা তা পূরণ হয়নি। লাভ নয় মূলধন তুলে নিতে পারলে বাঁচি।আপন টেক্সাটাইলে তিনটি থ্রি পিচ কিনে এক হাজার টাকা ছাড় পেয়ে খুশি কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, আপনের কাপড় ভালো। ভিড় দেখে শঙ্কিত। সেলসম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, গতবছর মেলায় এত লোকসান হয়নি। এবার ছাড় দেওয়ার পরও ক্রেতা কম হওয়ায় হতাশ তিনি।
পরিবার নিয়ে মেলার শেষ দিন খাদ্যপণ্য প্রাণ’র স্টলে বেশ কয়েকটি আইটেম ছাড়ের সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না গুলশান থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল হক।নুরুল হক বলেন, খাদ্যপণ্যে এত ছাড় বাইরে পাওয়া কষ্ট সাধ্য। মেলায় টাটকা পণ্য পাওয়া যায় বলে কিনতে আসা।অপরদিকে, পোশাক ও কাপড়ের ক্ষেত্রে শেষদিনেও দেশীয় পোশাক স্টলের চেয়ে বিদেশি স্টলে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি।
বিদেশি একটি স্টলে শেষ দিনে অফার পেয়ে কাপড়ের প্রশংসার গৃহিণী রুবিনা হক। তিনি বলেন, দেশীয় কাপড় তেমন আরামদায়ক না। অফারও এত বেশি না।এশিয়ান টেক্সাইল লিমিটেডের সেলসম্যান আবুল হোসেন বলেন, দেশীয় কাপড়ের ভালো বিদেশি পণ্যের চেয়ে কম না।তিনি আরো বলেন, ক্রেতারা বিদেশি কাপড় সচরাচর দেখে না বলে মেলায় একুট ঝোঁক বেশি। ৯ দিনে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। তবে আজকেও বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
হরতাল-অবরোধের কারণে এবার মেলায় ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ শতাংশ লোকসান গুণতে হবে বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে,প্যাভিলিয়ন ও স্টলে গৃহস্থালি থেকে শুরু করে ওভেন, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য মিলছে। বেশি লোকসান হবে ছোট ব্যবসায়ীদের। ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলোর অর্ডার গত বছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসায় তারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালের মেলায় ৪৩ কোটি টাকা রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে পায় ১৫৭ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ৮০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।২০১৫ সালে রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে ৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকার। প্রতবছরের মতো এবারও মেলার আয়োজন করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
১৩ লাখ ৭৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের মেলা মাঠে দেশি-বিদেশি ৪৪১টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে।এরমধ্যে চারটি মহাদেশের (এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ) মোট ১৪টি দেশ মেলায় তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেছে।বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি মেলায় অংম নেয়।মেলায় প্রথমবারের মতো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ২৯টি সংরক্ষিত স্টল বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।বাণিজ্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।অনুষ্ঠানে প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে।