সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

দৈনিকবার্তা-সিলেট, ১০ ফেব্রুয়ারি: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিওমেক) ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ নবজাতক, বিভিন্ন বয়সের ১০ শিশুসহ ৩২ জন মারা গেছে। স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন ঠাণ্ডাজনিত কারণসহ বিভিন্ন রোগে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিওমেকের ভিন্ন ভিন্ন ওর্য়াডে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫ জনই নবজাতক। ভুল চিকিৎসায় এ শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা জানিয়েছে। সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণক্ষমতা ৫০০ জন হলেও বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৭১৮ জন। বিপুল সংখ্যাক এই রোগীকে সেবা দিতে যে পরিমাণ জনবল দরকার না থাকাকে এ মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন রোগীর সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন নবজাতকসহ ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যার জন্য চিকিৎসকদের অবহেলাকে দুষছেন স্বজনরা।হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২১, ২২ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাইনি ওয়ার্ডে এসব শিশুর মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম জানিয়েছেন।তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই, ২২ নম্বরে পাঁচ এবং গাইনি ওয়ার্ডে বাকি তিনজন মারা গেছে।

এরা হলো- সিলেটের গোয়াইনঘাটের সায়মা ( দেড় বছর), জকিগঞ্জের দশগ্রামের আকাশ (সাত দিন), সুনামগঞ্জ সদরের তাজরিয়া (সাড়ে তিন বছর), মেহেদী (আড়াই মাস), ছাতকের শাফরাজ (তিন বছর), বিশ্বম্ভরপুরের নাদিনা (ছয় মাস), হবিগঞ্জের ইয়াসমিন (তিন দিন) এবং নগরীর শেখঘাটের নিলুফার নবজাতক মেয়ে, শাহপরাণ এলাকার আসমা ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকার সন্ধ্যা রাণীর নবজাতক মেয়ে।এদের ছয়জন জন্ম জটিলতায়, দুই জন অপুষ্টিজনিত সংক্রমণে, একজন নিউমোনিয়ায় ও অন্য একজন ঠাণ্ডাজনিত রোগে মারা গেছে বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক সালাম। জেন্মগত জটিলতা, মারাত্মক সংক্রমণ, অপুষ্টি ও নিউমোনিয়ার কারণেই শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছে। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু, বলেন তিনি।

তবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতোগুলো শিশুর মৃত্যুর এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অন্যান্য রোগী এবং মৃত শিশুদের স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই এতগুলো শিশুর মৃত্যু হয়েছে।নবজাতক সন্তানকে হারানো সন্ধ্যা রানীর স্বামী রানা পাল বলেন, হাসপাতালের নার্স ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই শিশুগুলো মারা গেছে। ভর্তির পর শিশুর ঠিকমতো পরিচর্যা করেননি ডাক্তার-নার্সরা। স্বজনরা রোগীদের অবস্থা জানাতে নার্স ও চিকিৎসকদের কাছে গেলে তারা দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।তদন্ত করে দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এই ঘটনার পর সকালে শিশু বিভাগ পরিদর্শন করে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর বলেন, চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা নেই। আমরা বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছি।

তবে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ইসমাইল পাটোয়ারীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম জানিয়েছেন।কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।১০ শিশু ছাড়াও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো ২২ রোগীর মৃতু্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের জানামতে সেখানে কোনো অঘটন ঘটেনি। কিছু ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হবে বলে জানান তিনি।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতোগুলো শিশুর মৃত্যুর এ ঘটনাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক বলে দাবি করলেও হাসপাতালের অন্যান্য রোগী এবং মৃত শিশুদের স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই একদিনে এতগুলো শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।উপপরিচালক আবদুস সালাম বলেন, জন্মগত জটিলতা, অপুষ্টি, সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছে। তারপরও আমরা চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তারা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেবে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ মালিক।মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে ৩ সদস্যের একটি টিম পাঠনো হয়েছে।এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন যুগ্ম সচিব। আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখে একটি প্রতিবেদন পেশ করবে কমিটি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন,আমরা চেষ্টা করবো এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে।শুনেছি ৩২ জন মারা গেছে।তিনি বলেন, মারামারিতে গুরুতর আহত হয়ে ৫ জন মারা গেছে। শীতজনিত কারণে আরো কিছু শিশু মারা গেছে। এছাড়া নরমালি প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬ জন শিশু মারা যায়। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যে সব ব্যবস্থা নেয়ার তা আমরা নেবো।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, হরতালের কারণে অনেক রোগী সময় মতো হাসপাতালে আসতে পারেন না। তাই এটা এমন অস্বাভাবিক ঘটনা না।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।