দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি: যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, বইয়ের গাড়িতে আগুন দেয়া কোনো আন্দোলন নয় বিএনপির অবরোধ এবং তাতে নাশকতাকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ অভিহিত করে তা কাটিয়ে ওঠতে পারার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা, বইয়ের গাড়িতে আগুন দেয়া কোনো আন্দোলন নয়৷ এমন অমানবিক কাজ কোনো মানুষ করতে পারে এটা ভাবতেই কষ্ট হয়৷ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এ দেশকে মাঝেমধ্যে মানুষের সৃষ্ট কিছু দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয়৷ গত এক মাস ধরে আমাদেরকে কিছু মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে৷ ইনশাল্লাহ এ দুর্যোগ আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব৷বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা এমন এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগও যেমন মোকাবেলা করতে হয়, তেমনি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয় বলে জানান তিনি৷
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো আমি গিবত গাইতে চাই না, কারো কথা বলতে চাই না যারা দেশের উন্নয়ন চোখে দেখেন না, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ, যারা দেশকে উন্নয়নের পথ থেকে তুলে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চান, দেশবাসী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন৷ আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা কোনো আন্দোলন হতে পারে না এমন অমানবিক কাজ কোনো মানুষ করতে পারে, তা বিশ্বাস হয় না৷ যারা এমন করছে, তারা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী
বিজ্ঞান প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ৷ ২০৪১ সালে হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ৷
২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে সরকারের অঙ্গীকার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে তথ্য প্রযুক্তিতে সক্ষম করে তুলতে কাছ করছে সরকার৷ ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত দেশ গড়ে তোলা হবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা; এটি আর এখন স্বপ্ন নয়৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে ৷ জমিতে ফসল ফলাতে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারছেন কৃষক৷
বিজ্ঞান প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ৷ ২০৪১ সালে হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ৷তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মেধার অভাব নেই৷ শুধু মেধা বিকাশের দরকার৷ বর্মান সরকার শুধু মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে৷ আমরা চাই, প্রযুক্তি ব্যবহার ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করুক৷ ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রযুক্তি বিভেদ মুক্ত দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য৷
সরকার ই-গভর্নেন্স অনেকটাই বাস্তবায়ন করে ফেলেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান৷ তাই আমরা কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ফোন, বেতার, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মতো মাধ্যমের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি৷
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে আইসিটি দক্ষ জনবলের প্রয়োজন মেটাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪ হাজার জনবলকে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা গ্রহণ করেছে৷ আমরা ২০১৮ সাল নাগাদ ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও সেবাখাতের অবদান ১% এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি৷
হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় ক্রমান্বয়ে এই অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে৷উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়৷ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও অনুষ্ঠানে ছিলেন৷
তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতে চার দিনের এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে৷ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের ( বেসিস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় ২৫টি দেশের ৮৫ জন বিদেশি বক্তা ২৪টি সেমিনার, নয়টি কনফারেন্স এবং ১১টি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন৷
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার ও বেসিসের সভাপতি শামীম আহসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷ কংগ্রেস অধিবেশনের কারণে এই প্রযুক্তি মেলায় আসতে না পারায় আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কংগ্রেসম্যান মাইক হোন্ডার একটি ভিডিওবার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়৷আইসিটি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতে এখানেই ভবিষ্যত্’ স্লোগানে ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি চলবে এই মেলা৷
এবারপ্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিন ঝাও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন৷ এছাড়া মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আদীম, নেপালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. মিনেন্দ্র প্রসাদ রিজা ও ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ডি এন ডানগাযেল মেলায় অংশ নেবেন৷
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ২৫টি দেশের ৮৫ জন বিদেশি বক্তা অংশ নেবেন৷ তারা ২৪টি সেমিনার, নয়টি কনফারেন্স এবং ১১টি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেবেন ফেইসবুক এশিয়া প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আখি দাস এবং গুগলসহ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও মেলার বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেবেন৷ দেশের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল ব্যক্তিত্বদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে৷ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন আইটিইউ’র মহাসচিব হোউলিন ঝাও টিপসি অ্যান্ড টাম্বলার’র প্রতিষ্ঠাতা বয়েডলু পোলেন্টাইন, ক্লাউডক্যাম্প’র প্রতিষ্ঠাতা ডেভ নিয়েলসেন, টাই সিলিকন ভ্যালি’র প্রেসিডেন্ট ভেঙ্ক শুক্লা৷
এছাড়াও প্রদর্শনীতে দেখা মিলছে গুগলের সাউথ এশিয়ার হেড অব সেলস বেন কিং, গুগলের হেড অব এজেন্সি ডেভেলপমেন্ট বিকি রাসেল, মার্কেটিং স্পেশালিস্ট ক্যাটি স্যান্ডারস, গুগল স্পিচের সফটওয়্যার প্রকৌশলী রবি রাজকুমার, গুগলের পার্টনার ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার অক্ষয় সন্থালিয়া, গুগল সাউথ এশিয়ার ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্ট ফজল আশফাক, গুগল ট্রান্সলেটের সফটওয়্যার প্রকৌশলী আর্নে মৌসার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের৷
গুগল ছাড়াও থাকছেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর এবং হেড অফ পাবলিক পলিসি আঁখি দাস, অ্যাকসেঞ্চার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অবিনাশ ভাসিস্তা, অগমেডি’র সিইও এবং কো-ফাউন্ডার আইয়ান শাকিল, এনটিএফ থ্রির প্রকল্প পরিচালক মার্টিন লাবি্ব, বিক্রয় ডটকমের প্রধান মার্টিন মালস্ট্রম প্রমুখ৷এসব বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ২০টি সেমিনার, ১১টি কনফারেন্স, ১৩টি টেকনিক্যাল, ই-গভর্নেন্স নিয়ে ১১টি এবং ৩টি স্পেশাল সেশনের আয়োজন করা হয়েছে৷