pic-13_184885

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে অপরাজেয় অভিহিত করে দেশব্যাপী চলমান সহিংসতার জন্য দায়ী অপরাধী চক্রকে পরাজিত করে দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাঙালি অপরাজেয়৷ অন্যায়ের কাছে কখনো পরাজয় মানেনি৷ এবারও তারা পরাভূত হবে না৷ জঙ্গিদের কাছে আমরা কখনো নতি স্বীকার করবো না৷

তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধের নামে এ হিংস্র হায়েনাদের দেশব্যাপী মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- আমরা রম্নখবই৷ সন্ত্রাসের হোতাদের পরাজিত করেই দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠা করবে ইনশা আলস্নাহ৷প্রধানমন্ত্রী মনিবার সকালে হোটেল র্যাডিসনে আনত্মর্জাতিক রোটারী শানত্মি সম্মেলন-২০১৫’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন৷ রোটারী ক্লাব ঢাকা মহানগর আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কে আর রবিনদ্রন৷

রোটারী ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩২৮১’র জেলা গভর্নর সাফিনা রহমান ও একই সংগঠনের ৩২৮২’র জেলা গভর্নর প্রকৌশলী এম এ লতিফ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং এতে সম্মেলনের সভাপতি আফতাবুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা দেন ও ঢাকা মহানগর রোটারী ক্লাবের সভাপতি নিয়াজ রহিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷বিদায়ী গভর্নর এম আউয়াল ইনভোকেশন পাঠ করেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাঙালি জাতি কখনই উত্‍পীড়কদের কাছে মাথা নত করেনি৷ ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদা রৰা করেছে, ১৯৬৯ সালে নিপীড়ক স্বৈরাচারী আয়ুব সরকারের পতন ঘটিয়েছে, ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি৷

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতি কাটিয়ে দেশ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচেছ, তখন তারা আবারো একাত্তুরের কায়দায় মানুষের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও সম্পদ লুন্ঠনকারীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটছে৷প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, রাজনীতি কার জন্য ? রাজনীতি তো সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন৷ কিন্তু নিরীহ মানুষকে এভাবে হত্যা করে কি অর্জন করতে চায় বিএনপি-জামায়াত৷

তিনি বলেন, তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি৷ এটা তাদের ভুল৷ তাদের এ ভুলের খেসারত জনগণকে দিতে হবে কেন ?প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকদের পেট্রোল বোমা হামলায় প্রায় ৫৫ জন পুড়ে মারা গেছেন৷ কয়েক শ’ মানুষ হাসপাতালের বেডে অমানুষিক নরক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন৷ পোড়া মানুষের গন্ধে বার্ণ ইউনিটের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, এসব অমানবিক কাজ কারা করছে তা দেশবাসী জানেন৷ রাজনীতির নামে সাধারণ মানুষকে এভাবে পুড়ে মারার মতো নৃশংসতা এদেশের মানুষ আগে আর কখনো দেখেনি৷

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে একইভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় তারা শত শতগাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ি৷ মহাসড়কসহ রাসত্মার দু’পাশের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছে৷ হত্যা করা হয়েছে পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য৷তিনি বলেন, তাদের সহিংস হামলা, পেট্রোলবোমা-অগি্নসংযোগ ও বোমা হামলায় প্রায় ২শ’ নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে৷ সরকারি অফিস, বিদু্যত্‍ কেন্দ্র, ফুটপাতের দোকান এমনকি নিরীহ পশুও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি৷ রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির ও পেগোডা৷

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে শত শত পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে৷ ট্রেনের লাইন উপড়ে ও ফিসপেস্নট খুলে শত শত বগি ও রেল ইঞ্জিন ধ্বংস করা হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের দিন তারা ৫শ’ ৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে৷ প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে৷ তারা নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়েছে এবং আগুন দিয়েছে৷

বাংলাদেশের মানুষ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ পছন্দ করে না একথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় সন্ত্রাসবাদের বিরম্নদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যা”িছ৷ কোন ব্যক্তি বা সংগঠন যাতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য কোন রাষ্ট্রের বিরম্নদ্ধে সন্ত্রাসী তত্‍পরতা পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষা বাহিনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা দল ও পুলিশ পাঠানোর মধ্য দিয়ে বিশ্ব শানত্মির পক্ষে বাংলাদের অঙ্গীকার ও অবদান প্রতিফলিত হয়েছে৷ নারীর ক্ষমতায়নের অবস্থানের সাথে সংগতি রেখে জাতিসংঘ শানত্মিরৰা বাহিনীতে সর্বাধিকসংখ্যক নারী পুলিশ পাঠানো হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী সকল প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী শানত্মি প্রতিষ্ঠায় রোটারীয়ানদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, তারা ধনী-দরিদ্র, যোগ্য-অযোগ্য, ৰমতাবান ও ৰমতাহীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী দেওয়াল অপসারণ করে সারাবিশ্বের শানত্মির জন্য কাজ করে যাবেন৷

তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে সমাজের একটা অংশকে পশ্চাদপদ রেখে উন্নয়ন বা শানত্মি স্থাপন কোনটাই সম্ভব নয়৷ বিত্তবান ও শিক্ষিত মানুষেরা এগিয়ে আসলে সমাজ থেকে নিরৰরতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং কুপমুন্ডুকতা দূর করে শানত্মিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব৷আত্মত্যাগের উর্ধে সেবা এই ব্রত দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে রোটারী সামাজিক উন্নয়ন ও বিশ্ব শানত্মি প্রতিষ্ঠায় এক শতাব্দির অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে একথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনটি বাংলাদেশেও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে৷ রোটারীগণ নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালী উন্নয়ন, গুরুতর রোগব্যাধী দূরীকরণ, প্রসুতি ও নবজাতকের সেবা, শিৰা ও স্বাৰরতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷প্রধানমন্ত্রী কৃষি, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন খাতে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, গত ৬ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে৷ আগামী ৪ বছরে দারিদ্র্যের হার আরো ১০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷