দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি: হরতালের সময় বাড়ানোর জন্য বুধবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবেুজানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ৷ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন৷পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উত্কন্ঠা দেখা দেয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত এলো৷গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ ২০ দলের অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি হরতাল থাকায় তা পিছিয়ে ৬ তারিখ নেয়া হয়৷
শিক্ষামন্ত্রীর বলেন, আগামী ৬ তারিখ এসএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র ও ৭ তারিখ বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নেওয়া হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০টায়৷
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই পরিবর্তিত সূচি তুলে ধরে পরীক্ষা শেষ করতে খালেদা জিয়া এবং ২০ দলের নেতাদের সহযোগিতা চান৷তিনি বলেন, শুধু পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়; শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতা ও চেতনায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যার খেসারত বহু বছর ধরে দিতে হবে৷এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারির ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা একই কারণে পিছিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সময় রাখা হয়৷
ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম পরীক্ষা হবে, যাতে অংশ নেবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী৷পরিবর্তিত সূচিতে শুক্র ও শনিবার পরপর দুদিন দুটি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের, যারা উত্কন্ঠায় পড়ায় মন দিতে পারছে না বলে অভিভাবকরা জানিয়েছে৷
সূচি বদলে যাওয়ায় শুক্রবার এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র; দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং এসএসসি ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বাংলা-২ (৮১২১) এর পরীক্ষা হবে৷ এসব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার৷
আর শনিবার এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র; দাখিলে হাদিস শরিফ এবং এসএসসি ভোকেশনালে সকালে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং বিকালে ইংরেজি-২ (৮১২২) বিষয়ের পরীক্ষা হবে৷ এসব পরীক্ষা বুধবার হওয়ার কথা ছিল৷এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দিতে সরকারের আহ্বান নাকচ করে গত শুক্রবার অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি জোট৷ সেইসঙ্গে রোববার থেকে সারা দেশে ৭২ ঘন্টার হরতাল দেওয়া হয়, যার মেয়াদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে আশা করেছিলাম আর হরতাল দেবেন না৷ সবার মধ্যেও সেই মনোভাব ছিল৷… বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন৷ এটা দুঃখজনক, জাতির জন্যও দুর্ভাগ্যজনক৷
এর ফলে পরীক্ষার্থীদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষা দিতে যাবে৷ এটা তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত করে৷
পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি ভবিষ্যত্ প্রজন্মের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করে দেন৷
নাহিদ বলেন, সরকার আশা করেছিল, ১৫ লাখ শিক্ষার্থী তাদের জীবনের সব থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দিতে পারবে৷ কিন্তু তা সম্ভব হল না৷ সকল রাজনৈতিক দলের কাছে, যে যেখানে আছেন তাদের কাছে আবেদন, পরীক্ষা বাধাহীন করে দেওয়া ন্যায়সঙ্গত দাবি৷ কিন্তু সেই দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ আবার সেই হরতাল দেওয়া হয়েছে, তাই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হল৷
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট হরতালের কর্মসূচি আর বাড়াবে না- এমন আশা রেখে নাহিদ বলেন, আমরা এখনো আশা রাখব মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ আছে সেটা তারা বিবেচনা করে কর্মসূচি আর বাড়াবেন না৷ আশা করি বোরবার থেকে সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷
এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া ও ২০ দলের সহযোগিতা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি মাননীয় খালেদা জিয়ারও সহযোগিতা চাচ্ছি৷ তিনি ইন্সস্ট্রাকশন দেবেন যেন ছেলেমেয়েরা ভালমত পরীক্ষা দিতে পারে- যে যেখানে আছ আমার দল ও ফ্রন্টের- তোমরা সহযোগিতা কর৷ আমি আশা করি তিনি (খালেদা জিয়া) এই আহ্বান জানাবেন যে পরীক্ষার দুইদিন তোমরা বিরক্ত করো না, আর বাকি দিনগুলোতও তোমরা পরীক্ষা দিতে দাও৷
শুক্র-শনিবারও হরতাল হলে কী হবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, অনুমানভিত্তিক আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই৷ আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি আছে৷ আশা করছি পরবর্তী পরীক্ষার দিনগুলোতে তারা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবেন৷ তাই অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো দরকার নেই৷অন্যদের মধ্যে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সব-কমিটির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়৷ওই বছরের জেএসসি- জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়৷
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়৷