দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি: মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এখন চিরচেনা রূপে৷ শনিবার সারা দিনই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো৷ তবে বিকাল গড়িয়ে গেলে মানুষের ঢল নামে মেলামাঠে৷ সন্ধ্যার পর মেলার প্রতিটি রাস্তায় ও স্টল-প্যাভিলিয়নে তিল ধারণের ঠায় ছিল না৷ স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসছেন মেলায়৷মালিকগঞ্জ থেকে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন চার বন্ধু নিয়াজ রহমান, সবুর আলী, আকাশ , ও মহসিনা ৷
নিয়াজ রহমান বলেন, প্রতি বছর অনেক বন্ধু-বান্ধব মেলায় ঘুরতে ও কেনা-কাটা করতে আসি৷ এবার হরতাল-অবরোধের কারণে শুরুর দিকে আসতে পারিনি৷ আমরা চার বন্ধু অনেক কষ্ট করে ঘুরতে এসেছি৷মহসিনা বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য হরতাল করেন তারা৷ কিন্তু চলন্ত গাড়িতে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে৷তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্বাথের্র কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা৷ আর রোববার থেকে অবরোধের মধ্যে ৭২ ঘন্টা হরতাল আহবান করা হয়েছে৷ এ যেন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা৷
বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরীজীবী উসমান আহমেদ দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন মেলায়৷তিনি বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে ভালো লাগে৷ তবে বাংলাদেশের যে অবস্থা ঘরে বসে থাকাও যেন নিরাপদ নয়৷
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা নিজেদের অবস্থান থেকে ছাড় না দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ এ অসুস্থ রাজনীতির জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে লাশের মিছিল৷ভ্যানে করে কাবাব বিক্রেতা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজনীতি বুঝি না, শুধু কাজ করে খেতে চাই৷হরতালের কারণে মেলায় তেমন লোকজন আসতে পারেন না বলে আমাদের বিকি-কিনিও ভালো না৷ হরতাল না থাকলে প্রতিদিন মেলা থেকে হাজার টাকার ওপরে লাভ করা যেতো৷ কিন্তু হরতালে ৩-৪শ’ টাকার মতো লাভ হয়৷
এদিকে অবরোধ মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য মেলার সময় ১০ দিন বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন৷ বছরের প্রথম দিনে শুরু হওয়া এ মেলা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই পড়ে টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালের কবলে৷ এ অবস্থা চলে গোটা মাস৷ এ সময় বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে৷ এতে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় পড়ে ব্যবসায়ীরা৷ এ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকার মেলার সময় ১০ দিন বাড়ায়৷ ফলে বেশ খানিকটা স্বস্তি চোখে পড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে৷ এছাড়া মাসের শেষ সময়ে এসে অবরোধ কিছুটা শিথিল হয়ে আসায় প্রচুর ক্রেতার দেখা মিলছে মেলায়৷ মেলায় গৃহস্থালি ও ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রীর স্টলগুলোয় তুলনামূলক বেশিসংখ্যক ক্রেতা ভিড় করতে দেখা যায়৷
দেশী-বিদেশী এসব স্টলে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে ওভেন, টিভি, ফ্রিজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র যাচাই-বাছাই করে কিনেছেন অনেকেই৷ এছাড়া মেলায় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম, পোশাক, কার্পেট, প্রসাধন, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, খাদ্যসামগ্রী, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, খেলার সামগ্রী, খেলনা, স্টেশনারি, অলঙ্কার, সিরামিকস পণ্য, আসবাব, হস্তজাত, প্লাস্টিক পণ্যের বিভিন্ন স্টলেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়৷
এদিকে দেশী-বিদেশী ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটরেও ছিল ক্রেতাদের আকর্ষণ৷ দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, যমুনা, ভিশন ছাড়াও বিদেশী ব্র্যান্ড শার্প, সিমেন্স, সিঙ্গার, গোদরেজ, র্যাংগস, এলজি ফ্রিজের প্যাভিলিয়নে ক্রেতা দর্শকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়৷ তবে বিদেশী পণ্যের চেয়ে দেশী পণ্যের দাম তুলনামূলক কম এবং মানেও ভাল হওয়ায় সেদিকেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা৷ এ ক্ষেত্রে ওয়ালটন ফ্রিজই এগিয়ে রয়েছে বলেই সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে৷ প্রযুক্তির নিত্যনতুন উত্কর্ষতার ছোঁয়া স্পর্শ করে রেফ্রিজারেটরেও৷ এবার তাই নন-ফস্ট ফ্রিজের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন ক্রেতারা৷ এ ফ্রিজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে ফ্রিজের ভেতরে বরফ জমা হয় না৷ বিদেশী ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ওয়ালটনও তৈরি করেছে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ৷
তবে এসব ফ্রিজ এখনও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে না৷ মেলায় ‘আপকামিং’ হিসেবে প্রায় ১০টি মডেল প্রদর্শন করছে ওয়ালটন৷ প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ আকরামুজ্জামান অপু জানান, এ বছরের জুন-জুলাইয়ে এগুলো স্থানীয় বাজারে আসবে৷
তবে এখন এগুলো রপ্তানি হচ্ছে বলে তিনি জানান৷ তিনি আরও জানান, ওয়ালটনের নিয়মিত মডেলগুলোতে মেলা উপলক্ষে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়৷ যেমন ২০ সিএফটি ডবি্লউ ২ডি-৩এফ৫ মডেলটির নিয়মিত মূল্য ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা হলেও মেলায় দেয়া হচ্ছে ৩৬ হাজার ৪০০ টাকায়৷ ১৫ সিএফটি ফ্রিজের দাম ৩৩ হাজার ৪০০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৯০০ টাকা৷ আর সবচেয়ে ছোট ফ্রিজ ৯ সিএফটি ২২ হাজার ৬০০ টাকার পরিবর্তে মেলায় বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার ৯০০ টাকায়৷ মেলায় মোট ৩৬টি মডেল প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে আকরামুজ্জামান অপু জানান৷
তিনি বলেন, ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহূত হয়েছে ডিইসিএস, আলট্রাবিড ফোর-ডি প্রযুক্তি, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ন্যানো পারটিকেল৷ ব্যবহূত হচ্ছে ৮০ শতাংশ বিদ্যুত্সাশ্রয়ী এনার্জি সেভিং এলইডি ল্যাম্প৷ এদিকে আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড আরএফএল গ্রুপর ভিশন রেফ্রিজারেটরেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়৷ সাড়ে ১৩ সিএফটি ও ১৩ সিএফটি ফ্রিজের দাম নিয়মিত ৩৪ হাজার টাকা হলেও মেলায় দেয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৬০০ টাকায়৷ ১২ সিএফটির মূল্য ২৭ হাজার ৯০০ টাকা থেকে কমিয়ে নেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ১১০ টাকা৷ ১১ সিএফটির দাম ৩১ হাজার টাকার পরিবর্তে নেয়া হচ্ছে ২৭ হাজার ৯০০ টাকা৷ মেলার কর্মকর্তারা জানান, ভিশন ব্র্যান্ডটি নতুন হলেও মেলায় প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে৷ ভিশন প্যাভিলিয়নে মিটসুবিশি ফ্রিজও বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান৷
সিঙ্গারের শো-রুমে বিক্রি হচ্ছে সিঙ্গার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি গোদরেজ ও সিমেন্স ফ্রিজ৷ সিমেন্সের নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ ২৯১ লিটারের দুটি মডেল ৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার ২৭৫ টাকা ও ৭৮ হাজার ৫৭৫ টাকায়৷ আর ৪০১ লিটারের একটি মডেল বিক্রি হচ্ছে একই ছাড়ে ৯৪ হাজার ৫২৬ টাকায়৷ গোদরেজের ৩৩০ লিটারের দাম পড়ছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকায়, ২৮৩ লিটার ৪২ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ২২৫ লিটারের দাম পড়ছে ৩৮ হাজার টাকা৷ এই ব্র্যান্ডেও পাঁচ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি সিঙ্গারের সব পণ্য ফ্রি হোমডেলিভারি দেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান৷