দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি: বিদু্যত্ সংযোগের পর এবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের কেবল টিভি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে৷ কার্যালয়ের ২০০ মিটারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক৷ শনিবার খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শাইরুল কবির এ খবর নিশ্চিত করেছেন৷শাইরুল কবির জানান, ভোর রাতে বিদু্যতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে সাময়িকভাবে বিকল্প বিদু্যতের ব্যবস্থা করা হয়৷ তবে পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি৷ বেলা ১১টার দিকে প্রায় ৫০টির মতো ফিল্টার পানির জার এবং দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বড় দুটি ড্রামে করে জ্বালানি তেল বিকল্প গেট দিয়ে ওই কার্যালয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে৷ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে ১০-১২ জন পুলিশ রয়েছে৷ তবে সাদা পোশাকে ওই কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা টহল দিচ্ছেন৷
শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ওই কার্যালয়ের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়৷ বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ডেসকোর এক লাইনম্যান এসে গুলশান কার্যালয়ের বিদু্যতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন৷ এ সময় তাঁর সঙ্গে গুলশান থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন৷
খালেদার কার্যালয়ে বিদু্যত্ নেই, পানি আছে দিদারের ভাষ্য, কার্যালয়ের বিদ্যুত্সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণ জানতে চাইলে ডেসকোর ওই লাইনম্যান বলেন, আমরা কিছু জানি না৷ থানার নির্দেশে বিদু্যত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এসেছি৷ যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা দাবি করেন, তিনি বিষয়টি জানেন না৷
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া৷ রয়েছেন আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তাঁদের দুই মেয়ে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান,মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, প্রেস উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ৷ এর বাইরে সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্য ও কার্যালয়ের কর্মচারীরা রয়েছেন৷
হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার না করলে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদু্যত্ ও পানির লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান৷ গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক-কর্মচারী- পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের সমাবেশে তিনি এ হুমকি দেন৷ এরপর মধ্যরাতে ওই কার্যালয়ের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়৷
খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শাইরুল কবির বলেন, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশেপাশের ভবনে বিদু্যত্ সংযোগ থাকলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদু্যত্ সংযোগ নেই৷
তিনি বলেন, গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা ও ডেসকোর লাইনম্যান মোকসেদ আলী এসে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদু্যত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন৷
দিদার আরো জানান, বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা কিছু জানি না৷ থানার নির্দেশে বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এসেছি৷ এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না৷ আর উপ-পরিদর্শক সোহেল রানার মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি৷
বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ডিস লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার বাসার, সরকারবিরোধী কর্মসূচি চলাকালে গত প্রায় এক মাস ধরে যেখানে অবস্থান করছেন তিনি৷
শনিবার ভোররাতে প্রথমে গুলশানের ওই বাড়ির বিদু্যত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে তার সহকারী শামসুদ্দিন দিদার জানান৷ পরে সেখানকার ডিস সংযোগ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে দাবি করেন বিএনপির গণমাধ্যম শাখার এই সদস্য৷
তিনি ক বলেন, কার্যালয়ের ভিতরে যে টেলিভিশন আছে তাতে ডিস লাইন পাওয়া যাচ্ছে না৷ আমার কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগও পাচ্ছি না৷ এর আগে রাত ২টা ৩৭ মিনিট থেকে ওই ভবন বিদু্যত্হীন হয়ে পড়ে বলে জানান তিনি৷ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটি করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা বিদু্যত্ লাইন কেটে দিয়েছে৷
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া৷ চলতি মাসের শুরুতে ওই বাড়ি থেকেই সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি৷ দুই সপ্তাহ আগে পুলিশ ওই বাড়ির সামনে থেকে সব ধরনের ব্যারিকেড সরিয়ে নিলেও সেখানেই থাকছেন খালেদা জিয়া৷
মালয়েশিয়া থেকে স্বামী আরাফাত রহমান কোকোর লাশ নিয়ে আসা শর্মিলা রহমান দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে ওই কার্যালয়ে রয়েছেন৷ ভোর ৫টার দিকে নিজস্ব জেনারেটর চালু করে ভবনে বিদু্যত্ সরবরাহ করা হলেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় বেলা ১টার দিকে তা বন্ধ করা হয়৷