দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি: হরতাল অরোধের মধ্যে নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছন, যারা এসব নৃশংসকাজে জড়িত তারা গণতন্ত্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, সভ্যতার শত্রু৷ এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির লাগাতার অবরোধের ২৪তম দিন বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন৷বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে দেশে চলমান নাশকতায় জড়িতদের গণতন্ত্রের শত্রু আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷ আর এ কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার করতে দেশবাসীর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
রাষ্ট্রপতি বলেন, সামপ্রতিককালে যেভাবে নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে অবলীলায় পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে তাতে গোটা দেশবাসীর সাথে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত, মর্মাহত৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিধা না করে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পরদিন রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান এল৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়৷ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যও ছিল তাই৷ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দল-মতের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক এবং সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য৷ এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরমতসহিষ্ণুতা,পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধসহ গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷অবরোধের এই ২৪ দিনে নাশকতা ও সহিংসতায় অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ যানবাহনে দেওয়া আগুন ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ৷
এর মধ্যে দুটি ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলাও হয়েছে, যিনি অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন৷ বিএনপির দাবি, সরকারের লোকেরাই নাশকতা করে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে৷
পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবদুল হামিদ বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায় এই দুষ্টচক্র আজ কোনো দেশের একক ভূখণ্ড ও সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ আজ বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে৷ বর্তমানে প্রচলিত অপরাধের পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে৷
এ কারণে পুলিশকে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারের মত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংঘবদ্ধ অপরাধের মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং এর মত আন্ত:দেশীয় অপরাধসহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংক্রান্ত অপরাধ দমনে বিশেষ কার্যক্রম নিতে হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন৷তবে আশার কথা, দেশে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ তাদের ভূমিকা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে৷
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, সংবিধান ও গণতন্ত্র সুরক্ষাসহ রাষ্ট্রবিরোধী সকল অপতত্পরতা রোধে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে৷পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবয়ব হচ্ছে সময়োপযোগী, আধুনিক, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী পুলিশ৷ তাই সকল পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ অবস্থান হতে জনসাধারণকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানসহ আইনগত সহায়তা প্রদানে বিশেষভাবে তত্পর থাকতে হবে৷
অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালনার ওপরই আইনের শাসন অনেকাংশে নির্ভর করে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে৷অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকসহ পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷